পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি অভিযান, আহত ৩ ফিলিস্তিনি, আটক ১০

অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে অন্তত তিনজন ফিলিস্তিনি আহত এবং দশজনকে আটক করা হয়েছে। শনিবার ভোরে বেথলেহেম, নাবলুসসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব অভিযান চালানো হয়।

ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তা সংস্থা ওয়াফা নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী বেথলেহেম শহরের জাতারা এলাকায় একটি ফিলিস্তিনি বাড়িতে অভিযান চালায় এবং দুজনকে মারধর করে। এছাড়া, বাড়িটির কাছে ইসরায়েলি সেনারা কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করলে আরেক ফিলিস্তিনি শ্বাসকষ্টে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

এদিকে, পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলীয় শহর নাবলুস থেকে নয়জনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে ফিলিস্তিনি আইন পরিষদের সদস্য জামাল তিরাওয়ি ও তার দুই ছেলেও রয়েছেন। বালাতা শরণার্থী শিবিরে তিরাওয়ির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এছাড়া, তুলকারেম থেকেও একজন ফিলিস্তিনি যুবককে আটক করা হয়েছে।

অন্যদিকে, দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর হেবরনে ইসরায়েলি সেনারা টানা চতুর্থ দিনের মতো কয়েক ডজন বাড়িতে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো আনাদোলুকে জানিয়েছে। সেখান থেকে প্রায় ৬০ জন ফিলিস্তিনিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পশ্চিম তীরে তাদের হামলা বাড়িয়েছে। তখন থেকে এ পর্যন্ত অধিকৃত এই ভূখণ্ডে ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় এক হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ১১ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। এছাড়া, আটক করা হয়েছে ২০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে।

শনিবার এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নাবলুস, রামাল্লা, বেথলেহেম ও হেবরনে ফিলিস্তিনিদের ওপর অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

মন্ত্রণালয় জানায়, এই হামলাগুলো ‘একটি পরিকল্পিত নীতির অংশ হিসেবে বিপজ্জনক ও চলমান সহিংসতার নিদর্শন, যার উদ্দেশ্য আমাদের জনগণকে আতঙ্কিত করা এবং জাতিগত নিধন ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করা।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ইসরায়েলি সরকারের উগ্রবাদী নীতিগুলো বসতি স্থাপনকারীদের আরও অপরাধ করতে উৎসাহিত করছে এবং ফিলিস্তিনি শহর, গ্রাম ও শিবিরে আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে সংগঠিত সহিংসতা ও সন্ত্রাসকে উসকে দিচ্ছে।’

ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডজুড়ে ফিলিস্তিনি জনগণকে রক্ষার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে একটি আন্তর্জাতিক সুরক্ষা ও শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠনের দাবি জানিয়েছে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ‘এই জঘন্য অপরাধের হোতাদের’ জবাবদিহির আওতায় আনার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা।

উল্লেখ্য, গত জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এক ঐতিহাসিক রায়ে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম থেকে সমস্ত বসতি সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানায়।