এমআরটি স্টেশন ঘিরে পরিকল্পিত নগর: যানজটমুক্ত ঢাকার নতুন দিগন্ত

রাজধানীর যানজট নিরসন ও পরিকল্পিত নগরায়ণের লক্ষ্যে গণপরিবহন করিডোর বরাবর ট্রানজিট-ভিত্তিক উন্নয়ন (টিওডি) প্রকল্পের তৃতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) আয়োজিত এই সেমিনারটি জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা জাইকার কারিগরি সহায়তায় আজ রোববার (২৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন ঢাকাকে একটি আধুনিক ও বাসযোগ্য শহরে রূপান্তরের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ এবং জাইকা বাংলাদেশ কার্যালয়ের প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহিদে। রাজউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রিয়াজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে বক্তারা ঢাকার সমন্বিত উন্নয়নে টিওডির গুরুত্ব তুলে ধরেন।

সেমিনারের শুরুতে প্রকল্প পরিচালক মাহফুজা আক্তার প্রকল্পের পটভূমি, কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, চলতি বছরের মে মাসে ট্রানজিট-ভিত্তিক উন্নয়ন (টিওডি) নির্দেশিকাটি সরকার অনুমোদন দিয়েছে এবং তা সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে। জাইকার পরামর্শক দলের প্রধান নোজোমি হিসিদা টিওডির ধারণা, প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক এবং ঢাকায় টিওডি উন্নয়নের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন। এছাড়া উত্তরা ও গাবতলী স্টেশনকে কেন্দ্র করে নমুনা সমীক্ষা, জাপানে টিওডি বিষয়ক প্রশিক্ষণ এবং গাবতলী স্টেশন এলাকার সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনার বিভিন্ন দিক উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে রাজউকের পরিকল্পনা সদস্য মোহাম্মদ বশিরুল হক ভুঁইয়া এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন ঢাকায় টিওডি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।

ঢাকার কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) অনুযায়ী ছয়টি এমআরটি এবং দুটি বিআরটি লাইন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যান (২০১৬-২০৩৫) এবং বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (২০২২-২০৩৫) অনুযায়ী, এই এমআরটি করিডোরগুলো ঘিরে টিওডি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। এই লক্ষ্যেই ২০২১ সালের ১০ জুন জাইকা ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে প্রকল্পটি নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো, বাংলাদেশে টিওডি ধারণা বাস্তবায়নের জন্য সহায়ক নীতি প্রণয়ন এবং নমুনা প্রকল্প এলাকার জন্য মডেল নগর নকশা তৈরি করা।

টিওডি বা ট্রানজিট-ভিত্তিক উন্নয়ন একটি আধুনিক নগর পরিকল্পনা ধারণা, যার মূল লক্ষ্য গণপরিবহন কেন্দ্রকে ঘিরে উচ্চ ঘনত্ব, মিশ্র ব্যবহার এবং পথচারীবান্ধব ও পরিবেশবান্ধব স্থাপনা নির্মাণ। এর সফল বাস্তবায়ন হলে রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি, জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি এবং স্থানীয় অর্থনীতির প্রসার ঘটবে। এই নীতি যানজট কমানোর পাশাপাশি ঢাকাকে একটি বাসযোগ্য ও আধুনিক শহরে রূপান্তরিত করতে সহায়ক হবে।

সেমিনারে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত থেকে প্রকল্পের নির্দেশিকা ও অন্যান্য বিষয়ে প্রশ্নোত্তর ও আলোচনায় অংশ নেন।