অর্থনীতির পাশাপাশি রাজনীতি: শেরিং তোবগের ঢাকা সফরে নতুন মাত্রা

রাষ্ট্রীয় সফরের দ্বিতীয় দিনে এক নজিরবিহীন রাজনৈতিক সংলাপে অংশ নিয়েছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে। তিনি বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন।

রবিবার রাতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে তার সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকটি বাতিল করা হয়। বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের জানান, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়েছেন এবং তার জন্য একটি ফুলের তোড়া পাঠিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ভুটান বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করে এবং যে দলই ক্ষমতায় আসুক, তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।

একই দিন সন্ধ্যায় জামায়াতে ইসলামীর একটি প্রতিনিধিদলও ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে এই বৈঠকে সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। জামায়াতের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকটি অত্যন্ত আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে সকালে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও শেরিং তোবগের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন, যেখানে উভয় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।

রাজনৈতিক আলোচনার পাশাপাশি সরকারের শীর্ষ পর্যায়েও গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের নানা দিক উঠে আসে। বৈঠকে ড. ইউনূস ১৯৭১ সালে ভুটানের বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। উভয় পক্ষ বাণিজ্য ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।

আলোচনায় কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের অগ্রগতি, জি টু জি ভিত্তিতে ভুটানে ওষুধ সরবরাহের প্রস্তাব এবং ট্রানজিট চুক্তি বাস্তবায়নের মতো বিষয়গুলো স্থান পায়। এছাড়া, ভুটানি শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশের সরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস আসন ৩০টিতে উন্নীত করায় প্রধানমন্ত্রী তোবগে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ বুয়েটে ১০টি ইঞ্জিনিয়ারিং আসন এবং বিকেএসপিতে ক্রীড়া বিজ্ঞানে ডিপ্লোমার জন্য আসন দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।

এর আগে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, আগামী দিনে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, জলবিদ্যুৎ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সম্পর্ক আরও গভীর ও জোরদার হবে। শেরিং তোবগে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য আসন বাড়ানোর জন্য ধন্যবাদ জানান।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর এই তিন দিনের সফরকে দুই দেশের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব ও সদিচ্ছার প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা যৌথ বিবৃতির মাধ্যমেও প্রকাশ পেয়েছে। ২২ নভেম্বর ঢাকা সফরে আসা শেরিং তোবগেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।