ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব: ভূখণ্ড ছেড়ে ন্যাটো থেকেও সরতে হবে ইউক্রেনকে

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া শান্তি প্রস্তাবে কিয়েভকে ভূখণ্ডগত বড় ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখল করা ক্রিমিয়া উপদ্বীপ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে মস্কোর ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও এই স্বীকৃতি দেবে।

এই প্রস্তাবে ইউক্রেনকে সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা থেকেও সরে আসতে বলা হয়েছে। দেশটির সংবিধানে বিষয়টি উল্লেখ করার পাশাপাশি ন্যাটোকেও নিশ্চিত করতে হবে যেন ইউক্রেনকে সদস্যপদ দেওয়া না হয়। একইসঙ্গে, ইউক্রেনের ভূখণ্ডে ন্যাটোর সেনা মোতায়েন নিষিদ্ধ করার শর্তও রয়েছে। এই পরিকল্পনাকে ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা ‘আত্মসমর্পণের শামিল’ এবং রাশিয়ার স্বার্থরক্ষার প্রতিফলন বলে মনে করছে।

সামরিক সক্ষমতা কমানোর বিষয়েও কঠোর শর্তারোপ করা হয়েছে। ট্রাম্পের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৬ লাখের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। দোনেৎস্কের যে অংশ এখনো ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেখান থেকেও তাদের সরে আসতে হবে। এই সেনা প্রত্যাহৃত এলাকাকে একটি নিরপেক্ষ বাফার জোন হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে, যদিও সেখানে রুশ সেনারা প্রবেশ করতে পারবে না।

জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কেন্দ্রটি জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) অধীনে চালু হবে এবং উৎপাদিত বিদ্যুৎ রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করা হবে। ২০২২ সালে যুদ্ধের শুরুতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি বড় অংশ রুশ বাহিনীর দখলে চলে যায়।

২৮ দফার এই প্রাথমিক প্রস্তাব নিয়ে তীব্র আপত্তির মুখে সম্প্রতি জেনেভায় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রি ইয়ারমাকের নেতৃত্বে এই আলোচনায় প্রস্তাবের কিছু ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। বৈঠকের পর মূল পরিকল্পনাটি ২৮ দফা থেকে কমিয়ে ১৯ দফায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

ইউক্রেন ও তার মিত্রদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ভূখণ্ড নিয়ে যেকোনো আলোচনার ভিত্তি হতে হবে যুদ্ধের বর্তমান সম্মুখসারি। রাশিয়ার দখলে থাকা কোনো অঞ্চলকে মস্কোর বলে স্বীকৃতি দেওয়া যাবে না। এ ছাড়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ন্যাটোতে যোগদানের সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের নিজস্ব সার্বভৌম বিষয়।

জেনেভায় আলোচনার পর ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে জানিয়েছেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনার নতুন সংস্করণটি আগের চেয়ে ‘বেশি বাস্তবসম্মত’। এরপর জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে কথা বলেন এবং শান্তি প্রক্রিয়ায় ইউরোপীয় দেশগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট এই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

শান্তিচুক্তি কার্যকর হওয়ার ১০০ দিনের মধ্যে ইউক্রেনে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের কথাও বলা হয়েছে ট্রাম্পের পরিকল্পনায়। এছাড়া, প্রস্তাবে যুদ্ধে জড়িত সব পক্ষকে পূর্ণ ক্ষমা ঘোষণার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার ফলে ভবিষ্যতে কোনো পক্ষই আর অভিযোগ বা দাবি তুলতে পারবে না।