সুদানে একতরফা তিন মাসের ‘মানবিক যুদ্ধবিরতি’ ঘোষণা

সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) সেনাবাহিনীর সঙ্গে চলমান সংঘাতের মধ্যে একতরফাভাবে তিন মাসের জন্য একটি ‘মানবিক যুদ্ধবিরতি’ ঘোষণা করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সহিংসতা বন্ধ এবং ত্রাণ সংস্থাগুলোর প্রবেশাধিকার বাড়ানোর আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে আরএসএফ। এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশটিতে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার পথ সুগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আরএসএফ নেতা মোহাম্মদ হামদান দাগালো (হেমেদতি) রেকর্ড করা এক বিবৃতিতে জানান, তার বাহিনী ও মিত্র গোষ্ঠীগুলো তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হওয়া এই মানবিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এর ফলে আগামী তিন মাস সব ধরনের শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকবে। দাগালো আরও জানান, এ সময়ে মানবিক কার্যক্রম নির্বিঘ্ন করতে ত্রাণকর্মীদের চলাচল সুরক্ষিত রাখা হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার গুদাম ও স্থাপনা রক্ষা এবং চিকিৎসা ও ত্রাণ দলগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের জন্য কোয়াড (যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত) এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের তত্ত্বাবধানে একটি মাঠ পর্যায়ের পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গঠনে আরএসএফ সম্মতি দিয়েছে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত কমিটি কাজ করবে। দাগালো আশা প্রকাশ করেন, আন্তর্জাতিক সমর্থন ও সুদানের বিভিন্ন পক্ষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই যুদ্ধবিরতি স্থায়ী শান্তির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হয়ে উঠবে। তবে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ‘সন্ত্রাসবাদী ইসলামিক মুভমেন্ট, মুসলিম ব্রাদারহুড, ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি এবং তাদের সহযোগীদের’ বাদ দেওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আরএসএফের এই ঘোষণার বিষয়ে সুদানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে, রোববার সুদানের ট্রানজিশনাল সার্বভৌম পরিষদের চেয়ারম্যান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান কোয়াডের একটি প্রস্তাবের সমালোচনা করেন, যদিও তিনি ওই প্রস্তাবের বিস্তারিত কিছু জানাননি। এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর কোয়াড সুদানে জরুরি মানবিক সহায়তার জন্য প্রথমে তিন মাসের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিল। গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও সুদানের সংঘাত নিরসনে কাজ করার ঘোষণা দেন।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সেনাবাহিনী ও আরএসএফের সংঘাতে হাজারো মানুষ নিহত এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গত মাসে আরএসএফ দারফুরের গুরুত্বপূর্ণ শহর আল-ফাশের দখল করে নিলে সেখানে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার আশঙ্কা তৈরি হয়, যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ অক্টোবর আরএসএফের আল-ফাশের দখলের পর সেখান থেকে এক লাখ ছয় হাজারের বেশি সাধারণ মানুষ পালিয়ে গেছে।