গ্যাসের অভাবে দিশেহারা রাজধানীবাসী, বাড়ছে খরচ

রাজধানীর ঘরে ঘরে গ্যাস সংকট এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, যার ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। একটা সময় ছিল যখন শুধু শীতকালে গ্যাসের চাপ কম থাকত, কিন্তু এখন সারা বছরই নগরবাসীকে এই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। অনেক এলাকায় দিনের বেলায় চুলা জ্বলে না বললেই চলে, ফলে বাসিন্দাদের রান্নাবান্নার জন্য গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় কিংবা বিকল্প ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে।

ভুক্তভোগীদের ভাষ্যমতে, মিরপুর, লালমাটিয়া, রায়েরবাজার, রামপুরা, পুরান ঢাকা, ধানমন্ডি ও মগবাজারসহ শহরের অধিকাংশ এলাকায় সকাল থেকেই গ্যাসের চাপ কমতে শুরু করে এবং বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা পুরোপুরি উধাও হয়ে যায়। এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে অনেকে বাধ্য হয়ে ইলেকট্রিক চুলা বা এলপিজি সিলিন্ডার কিনছেন। এতে একদিকে যেমন গ্যাসের বিল দিতে হচ্ছে, অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিল বা সিলিন্ডারের খরচও বহন করতে হচ্ছে, যা তাদের মাসিক বাজেটের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই সংকটের পেছনে চাহিদা ও সরবরাহের বিশাল ঘাটতিকে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা প্রায় ৩,৮০০ থেকে ৪,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট, কিন্তু এর বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ২,৬১৬ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে প্রতিদিন প্রায় ১,২০০ থেকে ১,৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থাকছে।

এই ঘাটতির একটি বড় অংশ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির মাধ্যমে পূরণ করার কথা থাকলেও সেখানেও রয়েছে প্রতিবন্ধকতা। দেশে দুটি টার্মিনালের মাধ্যমে দৈনিক এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহের সক্ষমতা থাকলেও বাস্তবে সরবরাহ হচ্ছে তার চেয়ে কম। যেমন, গত ২৪ নভেম্বর সরবরাহ করা হয়েছে ৮৮২ মিলিয়ন ঘনফুট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলএনজি সরবরাহ দৈনিক ৯৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের নিচে নামলেই সংকট তীব্র হয়।

অন্যদিকে, দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকেও উৎপাদন ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে দেশীয় উৎস থেকে প্রায় ১,৭৩৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতেও গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ জানান, গত বছরের তুলনায় গ্যাসের উৎপাদন প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট কমেছে। তিতাসের আওতাধীন এলাকায় দৈনিক চাহিদা প্রায় ২,১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট হলেও তারা পাচ্ছেন প্রায় ১,৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এই ঘাটতির কারণে রেশনিং করতে হচ্ছে, যার প্রভাব সরাসরি পড়ছে আবাসিক গ্রাহকদের ওপর। তার মতে, চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধান না কমা পর্যন্ত এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।

বিদ্যমান সংকট নিরসনে সরকার নতুন কূপ খনন এবং ভোলা থেকে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার মতো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা ভাবছে। তবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় সহসাই নগরবাসীর ভোগান্তি কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।