তুর্কি প্রতিরক্ষা শিল্প: রপ্তানি আয়ে অভাবনীয় উল্লম্ফন

প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ খাতে উচ্চমূল্যের উৎপাদনের ওপর ভর করে চলতি বছর তুরস্কের প্রতিরক্ষা রপ্তানি এবং কিলোগ্রাম প্রতি রপ্তানি মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটির প্রতিরক্ষা শিল্প প্রেসিডেন্সির (এসএসবি) তথ্য অনুসারে, এই খাতে কিলোগ্রাম প্রতি রপ্তানি মূল্য ৬৫ ডলারে পৌঁছেছে, যা তুরস্কের সাধারণ রপ্তানির গড় মূল্য (কিলোগ্রাম প্রতি ১.৫ ডলার) থেকে অনেক বেশি।

এসএসবি-র তথ্য বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই খাতের রপ্তানি ৭০০ কোটি ডলার অতিক্রম করেছে। কিছু নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম এবং উপ-ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কিলোগ্রাম প্রতি রপ্তানি মূল্য ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত হতে দেখা গেছে।

তুরস্কের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় হালকা ও মাঝারি ক্যালিবারের অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এসওয়াইএস গ্রুপ এই খাতের মূল্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক জাহিত উতকু আরল আনাদোলু সংবাদ সংস্থাকে জানান, তাদের কাজের ফলে এই খাতের কিলোগ্রাম প্রতি গড় রপ্তানি মূল্য ১২৫ ডলারে উন্নীত হয়েছে এবং পরবর্তী লক্ষ্য হলো এটিকে ২৫০ ডলারে পৌঁছে দেওয়া।

জাহিত আরল জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে পিস্তল উৎপাদন করত। কিন্তু ২০১৭ সাল পর্যন্ত লম্বা ব্যারেলের অস্ত্রের ওপর বিধিনিষেধ থাকায় বেসরকারি খাত শিকারের রাইফেল বা পিস্তল তৈরি করতে পারত না। তিনি বলেন, ‘পিস্তল উৎপাদন এখনো উচ্চ মূল্য সংযোজিত একটি খাত, কিন্তু এসওয়াইএস গ্রুপ ২০১২ সালে আরও বেশি মূল্য সংযোজিত পণ্য তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। আমরা শীর্ষ পর্যায়ের পিস্তল উৎপাদনে বড় ধরনের অগ্রগতি অর্জন করেছি এবং ভবিষ্যতের অস্ত্র তৈরির লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছি।’

তিনি আরও জানান, প্রতিষ্ঠানটি হালকা অস্ত্রের জন্য নিজস্ব সরঞ্জাম তৈরির কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য একটি সুরক্ষিত বলয় তৈরি করেছে। তার মতে, তাদের প্রতিষ্ঠানটি প্রথম সারির উৎপাদকদের মধ্যে অন্যতম, যারা পিস্তলের সঙ্গে রিফ্লেক্স সাইট যুক্ত করেছে। বর্তমানে তারা অস্ত্রের পাশাপাশি ৭০ হাজারেরও বেশি অপটিক সাইট বিক্রি করে।

বিশ্বজুড়ে ছোট অস্ত্রের উৎপাদনে সীমিত বিনিয়োগ এবং তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে এসওয়াইএস গ্রুপ মাঝারি ক্যালিবারের অস্ত্রের দিকে ঝুঁকেছে বলে জানান জাহিত আরল। তিনি বলেন, ‘আমরা আমেরিকান এবং ব্রিটিশ অস্ত্র নির্মাতাদের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার অর্জন করেছি এবং তাদের পণ্যগুলোকে যান্ত্রিক ও ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল সমাধানের মাধ্যমে স্থল, সমুদ্র এবং আকাশ প্ল্যাটফর্মে একীভূত করেছি।’

২০১৭ সালে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর, প্রতিষ্ঠানটি তাদের ১২.৭-মিলিমিটার হেভি মেশিনগান তৈরির কাজ শুরু করে এবং ২০২২ সালে তা সম্পন্ন করে। একই বছর এসওয়াইএস গ্রুপ যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক এইআই সিস্টেমসকে অধিগ্রহণ করে, যার ফলে তাদের পণ্যের তালিকায় ২০, ২৫ এবং ৩০-মিলিমিটারের অস্ত্র যুক্ত হয়।

জাহিত আরলের মতে, এসওয়াইএস গ্রুপের অধীনে পরিচালিত ইউনিোরোবোটিকস, যা দূর-নিয়ন্ত্রিত ফায়ারিং কন্ট্রোল সিস্টেম তৈরিতে বিশেষায়িত, প্রতিষ্ঠানটিকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এটিই কিলোগ্রাম প্রতি রপ্তানি মূল্য ১২৫ ডলার থেকে ২৫০ ডলারে উন্নীত করার পেছনে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে।

তিনি বলেন, ‘এসওয়াইএস গ্রুপ বিশ্বের তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি, যারা ৩০x১১৩-মিলিমিটার অস্ত্র তৈরি করে এবং দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি, যারা এই অস্ত্রের জন্য নিজস্ব দূর-নিয়ন্ত্রিত ফায়ারিং কন্ট্রোল সিস্টেম তৈরি করতে সক্ষম।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমাদের ব্যবস্থাগুলো অফশোর টহল জাহাজ, চালকসহ ও চালকবিহীন স্থল ও সামুদ্রিক প্ল্যাটফর্ম এবং রোটারি ও ফিক্সড-উইং বিমানে সবচেয়ে আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত সফটওয়্যারের মাধ্যমে কাজ করে।’