হাঙ্গেরিতে হতে পারে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ সম্মেলন

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভবিষ্যৎ আলোচনার ফল হিসেবে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে একটি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শুক্রবার মস্কোতে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবানের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এই সম্ভাবনার কথা জানান। পুতিন আরও উল্লেখ করেন, বুদাপেস্টে আলোচনা আয়োজনের প্রস্তাবটি মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকেই এসেছিল।

বৈঠকের শুরুতে পুতিন বলেন, ‘আমাদের (যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে) আলোচনা যদি বুদাপেস্টকে আলোচনার স্থান হিসেবে ব্যবহারের দিকে এগোয়, তাহলে আমি খুব খুশি হব এবং সহায়তা করার আগ্রহের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’

এর আগে, মার্কিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিওতে ওরবান তার মস্কো সফরের কথা ঘোষণা করেন। তিনি জানান, এই সফরের লক্ষ্য হলো ‘শীতকাল ও আগামী বছরের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে হাঙ্গেরির জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা’। তিনি আরও উল্লেখ করেন, রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে হাঙ্গেরির জন্য ছাড় পেতে তিনি চলতি মাসের শুরুতে ওয়াশিংটন সফর করেছিলেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে একটি শান্তিচুক্তি স্থাপনের লক্ষ্যে মস্কোর ওপর চাপ বাড়াতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত অক্টোবরে রাশিয়ার দুটি বৃহত্তম তেল কোম্পানি—রোজনেফ্‌ট ও লুকঅয়েল এবং তাদের ৩৪টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ওরবান প্রায়ই ব্রাসেলসের সমালোচনা করেন এবং ইউক্রেনের জন্য ইউরোপীয় তহবিল বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি যুদ্ধ থামাতে একটি কূটনৈতিক সমাধানকে সমর্থন করেন এবং ট্রাম্পের বর্তমান শান্তি প্রস্তাবের প্রতিও তার সমর্থন রয়েছে।

ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আলোচনার জন্য বুদাপেস্টে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে পরে সেই সম্মেলন বাতিল করা হয়। সে সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি একটি ‘ব্যর্থ বৈঠক’ চান না।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক

রুশ প্রেসিডেন্ট মস্কো ও বুদাপেস্টের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেন। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক বিষয়সহ কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও দুই দেশ এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেছে যা তাদের ‘খোলামেলাভাবে কথা বলতে এবং যেকোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে’ সুযোগ করে দেয়। রুশ প্রেসিডেন্ট আরও যোগ করেন, ‘এটি আমাদের শুধু আলোচনা করারই নয়, যেকোনো সমস্যার সমাধান খোঁজার সুযোগও দেয়।’

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য কমে যাওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। এর জন্য পুতিন ‘বহিরাগত বিধিনিষেধকে’ দায়ী করলেও বলেন, তাদের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। পুতিন বলেন, ‘এই বছর আমরা কিছুটা প্রবৃদ্ধি দেখেছি—অল্প, সামান্য, কিন্তু তারপরও ৭ শতাংশের বেশি।’ তিনি জ্বালানি খাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার প্রশংসাও করেন।

অন্যদিকে, ওরবান রাশিয়া থেকে স্থিতিশীল জ্বালানি সরবরাহকে ‘হাঙ্গেরির জ্বালানি নিরাপত্তার ভিত্তি’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বুদাপেস্ট এই সরবরাহের ‘স্থিতিশীলতা ও পূর্বাভাসযোগ্যতাকে’ গুরুত্ব দেয়। তিনি আরও বলেন, ‘হাঙ্গেরি আপনার দেশের সঙ্গে জ্বালানি আলোচনা বজায় রাখতে আগ্রহী এবং আজ আমি এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে চাই।’

ওরবান বলেন, ইউক্রেনের অন্যতম প্রতিবেশী হিসেবে হাঙ্গেরি চলমান যুদ্ধের সম্পূর্ণ প্রভাব অনুভব করছে। তিনি উল্লেখ করেন, হাঙ্গেরি শান্তি চায় এবং আশা করে যে সম্প্রতি ঘোষিত উদ্যোগগুলো শান্তির দিকে পরিচালিত করবে। তিনি যোগ করেন, ‘জনাব প্রেসিডেন্ট, আজকের বৈঠকটি আমাকে এটি নিশ্চিত করার সুযোগ দিয়েছে যে হাঙ্গেরি এই ধরনের আলোচনার জন্য একটি মঞ্চ সরবরাহ করতে প্রস্তুত এবং এই প্রক্রিয়া সফলভাবে শেষ করতে সহায়তা করতেও প্রস্তুত।’