৯ বাম দলের নতুন জোট ‘গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট’

দেশের বাম, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক ধারার ৯টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াতের বাইরে একটি তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে নতুন রাজনৈতিক জোট ‘গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছে।

শনিবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাংলাদেশ জাসদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় কনভেনশন থেকে এ জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সকাল ১১টায় দিনব্যাপী কনভেনশনের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়।

কনভেনশনে অংশ নিয়ে নতুন জোটে থাকার দলগুলো হলো- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন, বাসদ (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশ জাসদ, বাসদ (মাহবুব) এবং সোনার বাংলা পার্টি।

এ ছাড়া ঐক্য ন্যাপ, গণমুক্তি ইউনিয়ন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন ও নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চা শিগগিরই যুক্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বুদ্ধিজীবী, লেখক-সাংবাদিক, ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক, নারী সংগঠন, পেশাজীবী, প্রকৌশলী, আইনজীবী, স্থপতি, দলিত, হরিজন, সুফি ও সংস্কৃতিকর্মীসহ প্রায় দেড় হাজার অংশগ্রহণকারী কনভেনশনে উপস্থিত ছিলেন।

খসড়া ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ কাফী রতন। তিনি বলেন, দেশবাসীর শান্তি, নিরাপত্তা ও প্রতিশ্রুতিময় ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে প্রগতিমুখী গণতান্ত্রিক ধারার সরকার প্রতিষ্ঠা জরুরি। জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার জন্যই আমরা ‘গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট’ গঠন করছি।

তিনি আরও বলেন, জোট পরিচালনার জন্য অংশগ্রহণকারী দল-সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি পরিচালনা কমিটি গঠিত হবে। যৌথ নেতৃত্বের ভিত্তিতে ঐ কমিটিই জোটের কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করবে।

বিশিষ্ট চিন্তাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আজকের যুক্তফ্রন্ট হবে সমাজ-বিপ্লবের যুক্তফ্রন্ট। মানুষ রাজনীতিকদের বিশ্বাস করে না। তাদের বিকল্প দরকার। আমরা সেই বিকল্প উপস্থাপন করতে পারলে দেশে নতুন জাগরণ আসবে।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, জনগণ পরিবর্তন চায়, এটা বাস্তবে করতে পারবে বামপন্থীরা। সারা দেশে যারা দলীয় রাজনীতি করে না, কিন্তু অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে, তাদের সবাইকে এই জোটে যুক্ত করতে হবে।

সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সমালোচনামূলক মন্তব্য করে বলেন, রাজনীতিতে এখন সিট নিয়ে ব্যবসা চলছে। কঠিন সময় চলছে। আমরা যদি বরফ ভেঙে সামনে এগোতে পারি, জনগণের আস্থা ফিরে পাব।

বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা চলছে। এই পরিস্থিতিতে কৃষক, শ্রমিক, শিল্পী ও বুদ্ধিবৃত্তিক পেশার মানুষকে এক হতে হবে। আজ থেকে আমাদের পরিচয়, গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট।
এ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ।

তিনি বলেন, জুলাই সনদ দিয়ে বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতি বাদের কথা বলা হচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যকে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা চলছে। তাই জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক উত্থান এখন জরুরি।

এ ছাড়াও সভায় বক্তব্য দেন সোহরাব হোসেন, ইকবাল কবির জাহিদ, এস এ সবুর, হারুন অর রশীদ ভূঁইয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেকুজ্জামান, নাজমুল হক প্রধান, কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, রাজেকুজ্জামান রতন, মোশরেফা মিশু, সৈয়দ হারুন, মাসদু রানা, আব্দুল আলী, ডা. হারুন অর রশীদ, সীমা দত্ত, জলি তালুকদারসহ অনেকে।