আকাশসীমা নিয়ে ট্রাম্পকে ভেনেজুয়েলার কড়া হুঁশিয়ারি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক হুমকির কড়া জবাব দিয়েছে ভেনেজুয়েলা। দেশটির আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়ার এমন বক্তব্যের পর কারাকাস নিজেদের সার্বভৌমত্বের প্রতি ‘শর্তহীন সম্মান’ প্রদর্শনের দাবি জানিয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘সব বিমান সংস্থা, বিমানচালক, মাদক কারবারি এবং মানব পাচারকারীদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে ভেনেজুয়েলার আকাশসীমা এবং এর আশপাশের এলাকা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হবে।’ এরপরই ভেনেজুয়েলার পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইসিএও) অধীনে ভেনেজুয়েলার আকাশসীমা সুরক্ষিত। ১৯৪৪ সালের শিকাগো কনভেনশনের একটি ধারার কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এটি সুস্পষ্টভাবে স্বীকৃত যে প্রতিটি রাষ্ট্রের তার নিজ ভূখণ্ডের ওপরের আকাশসীমায় একচ্ছত্র এবং সার্বভৌম অধিকার রয়েছে। বলিভারিয়ান সরকার ঘোষণা করছে যে ভেনেজুয়েলা কোনো বিদেশি শক্তির কাছ থেকে কোনো আদেশ, হুমকি বা হস্তক্ষেপ মেনে নেবে না। ভেনেজুয়েলার প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের জাতীয় আকাশসীমা ব্যবহারে হস্তক্ষেপ, বাধা বা শর্ত আরোপ করার অধিকার নেই।’

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের প্রত্যাবাসনের জন্য নির্ধারিত উড়োজাহাজ চলাচল স্থগিত করেছে। বলা হয়, ‘স্বদেশে প্রত্যাবর্তন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে এই উড়োজাহাজগুলো পরিচালিত হতো। যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে এসব চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭৫টি ফ্লাইটে আমাদের ১৩,৯৫৬ জন নাগরিককে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মার্কিন সামরিক কার্যকলাপ ক্যারিবীয় অঞ্চল এবং উত্তর দক্ষিণ আমেরিকার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, সার্বভৌম রাষ্ট্র, জাতিসংঘ এবং সংশ্লিষ্ট বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোকে নীরব না থাকার আহ্বান জানানো হয়।

ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল ট্রাম্পের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি জানান, এই বক্তব্য লাতিন আমেরিকান অঞ্চলের প্রতি ঔপনিবেশিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা বহনকারী একটি দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। তিনি ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে ‘দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান’ করে বলেন, এটি একটি দেশের সার্বভৌমত্বকে ‘নির্দেশ দেওয়া ও হুমকি’ দেওয়ার শামিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি যোগ করেন, এ ধরনের বিবৃতি একতরফা, স্বেচ্ছাচারী ও শত্রুতামূলক, যা আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতির সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ এবং এটি ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে চলমান আগ্রাসন নীতির একটি অংশ।

এদিকে, দেশটির জাতীয় সংবাদমাধ্যম অনুসারে, ট্রাম্পের হুমকি সত্ত্বেও ভেনেজুয়েলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর মাইকেটিয়ার সিমন বলিভার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।

বিবৃতির শেষে বলা হয়, ‘ভেনেজুয়েলা আন্তর্জাতিক আইন এবং আমাদের জনগণের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনা থেকে প্রাপ্ত সমস্ত শক্তি দিয়ে মর্যাদা ও বৈধতার সঙ্গে এর জবাব দেবে। ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে এই হুমকি পুরো মহাদেশের শান্তি ও আমাদের জনগণের জন্য হুমকি। মুক্তিদাতা সিমন বলিভারের উত্তরাধিকারী হিসেবে আমাদের জনগণই বিজয়ী হবে।’