বিডিআর হত্যাকাণ্ড: আওয়ামী লীগের দলীয় সম্পৃক্ততা ও তাপসকে মূল সমন্বয়কারী হিসেবে চিহ্নিত করল তদন্ত কমিশন

বহুল আলোচিত পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দলীয় সম্পৃক্ততা এবং সাবেক সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপসকে মূল সমন্বয়কারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরো ঘটনাটি বাস্তবায়নে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ ছিল।

রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করা হয়। কমিশনের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান এবং অন্য সদস্যরা এটি জমা দেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য গণমাধ্যমকে জানানো হয়।

কমিশনের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার তদন্তে পাওয়া তথ্য তুলে ধরে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডটি ছিল সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। তিনি জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ সরাসরি ভূমিকা পালন করে। একটি ২০-২৫ জনের মিছিল পিলখানায় প্রবেশ করে এবং বের হওয়ার সময় সেই মিছিলে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

তদন্তে এই ঘটনার দায় তৎকালীন সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে সেনাপ্রধান পর্যন্ত সবার ওপর বর্তায় বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ, র‍্যাব এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার চরম ব্যর্থতার কথাও তুলে ধরা হয়। কমিশন মনে করে, ঘটনাটিকে রাজনৈতিকভাবে সমাধান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে, ঘটনার সময় কিছু গণমাধ্যম ও সাংবাদিকের ভূমিকা অপেশাদার ছিল বলেও উল্লেখ করা হয়।

কমিশন প্রধান আ ল ম ফজলুর রহমান তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে বলেন, ‘আমরা যখন কাজ শুরু করি, তখন ১৬ বছর আগের এই ঘটনার বহু আলামত ধ্বংস হয়ে গেছে।’ তিনি আরও জানান, ঘটনার সঙ্গে যুক্ত অনেকে বিদেশে চলে গেছেন। সাক্ষীদের দীর্ঘ সময় ধরে বক্তব্য গ্রহণ এবং তদন্তে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্তে বহিঃশক্তির সরাসরি সম্পৃক্ততার শক্তিশালী প্রমাণ মিলেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রতিবেদন গ্রহণ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাতি দীর্ঘদিন ধরে অন্ধকারে ছিল। আপনারা সত্য উদ্‌ঘাটনে যে ভূমিকা রেখেছেন, জাতি তা স্মরণে রাখবে।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে ইতিহাসের এই ভয়াবহ ঘটনা নিয়ে জাতির মনে থাকা অনেক প্রশ্নের অবসান ঘটবে।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআরের (বর্তমান বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানায় বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের দুই মাসের মধ্যে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল।