৯০০০ কোটি টাকা ক্ষতি: বিটিআরসির তিন চেয়ারম্যানসহ ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) দায়িত্ব পালনকালে বেআইনি সিদ্ধান্ত ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ৯ হাজার ১০ কোটি টাকার ক্ষতি করার অভিযোগে সংস্থাটির সাবেক তিন চেয়ারম্যানসহ ছয়জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার করার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগের প্রাথমিক যাচাই-বাছাই ও তদন্ত শেষে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পাওয়ায় কমিশন মামলার অনুমোদন দিয়েছে।

বিটিআরসির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বেআইনি ও অনুমোদনবহির্ভূত সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রাষ্ট্রের বিশাল অঙ্কের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে, বলেন তিনি।

দুদকের অনুমোদন পাওয়া অভিযোগে যাদের নাম রয়েছে- বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস, শাহজাহান মাহমুদ, মো. জহুরুল হক, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান, সাবেক কমিশনার মো. রেজাউল কাদের এবং মো. আমিনুল হাসান।

দুদকের মতে, ২০১৫-২০১৮ সালের মধ্যে দায়িত্ব পালনকালে এই কর্মকর্তারা সরকারের অনুমোদন ছাড়াই আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটরদের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন।

অভিযোগ অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক ইনকামিং কলের টার্মিনেশন রেট পরীক্ষামূলকভাবে এক বছরের জন্য ০.০৩ মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে ০.০১৫ ডলার করা হয়। সঙ্গে বিটিআরসির রেভিনিউ শেয়ার ৫১.৭৫% থেকে কমিয়ে ৪০% করা হয় এবং আইজিডব্লিউ অপারেটরদের শেয়ার ১৩.২৫% থেকে বাড়িয়ে ২০% করা হয়।

এই হার শুধু পরীক্ষামূলক পর্যায়ের জন্য নির্ধারিত থাকলেও কোনো সরকারি অনুমোদন ছাড়াই তা ২৮ মাস ধরে অব্যাহত রাখা হয়, যা তদন্তে ‘গুরুতর অনিয়ম’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

দুদকের হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ- রেভিনিউ শেয়ারে ক্ষতি: ৩৮৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, কম রেটে কল আনায় ক্ষতি: ২,৯৪২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ক্ষতি: ৭২ লাখ ১০ হাজার ৯৬৯ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫,৬৮৫ টাকার বেশি)

সব মিলিয়ে রাষ্ট্রের মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯,০১০ কোটি ৭৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।

দুদক জানিয়েছে, এই অনিয়ম ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে নিম্নোক্ত ধারায় মামলা করা হবে-দণ্ডবিধি: ধারা ৪০৯ / ৪১৮; দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭: ধারা ৫(২) এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২: ধারা ৪(২) ও ৪(৩)।

দুদক বলছে, বেআইনি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ক্ষতির পাশাপাশি মানি লন্ডারিংয়েরও প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ।

দুদক সূত্র জানায়, অনুমোদনের পর দ্রুতই মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এরপর তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হাতে নেওয়া হবে।