বাড়ছে শীতের তীব্রতা, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রিতে নামার পূর্বাভাস

অবশেষে প্রকৃতিতে নিজের দাপট দেখাতে শুরু করেছে শীত। দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা দ্রুত কমতে শুরু করেছে। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ও স্থানীয় আবহাওয়া অফিসগুলোর তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাত থেকে আগামী সোমবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে রাতের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি নেমে যেতে পারে।

বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিন দেশের আবহাওয়া পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। সংস্থাটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, জয়পুরহাট, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, যশোর ও শ্রীমঙ্গল এলাকায় তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করতে পারে। এসব অঞ্চলে তীব্র শীত অনুভূত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্যদিকে গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, বগুড়া, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, খুলনা ও গোপালগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসতে পারে। রাজধানী ঢাকাতেও শীতের অনুভূতি বেড়েছে। এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ থেকে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। দিনের বেলা তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও ভোরের দিকে ও রাতের শেষ ভাগে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হবে।

মাঠপর্যায়ের তথ্যে দেখা গেছে, পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রামে শীতের প্রকোপ সব থেকে বেশি। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার সেখানে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকায় এবং ঘণ্টায় ১০-১১ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় শীতের অনুভূতি তীব্র হচ্ছে। একই অবস্থা কুড়িগ্রামেও; সেখানে টানা তিন দিন ধরে তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রির নিচে অবস্থান করছে। বৃহস্পতিবার সকালে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঘন কুয়াশার কারণে সড়কগুলোতে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। এতে যাতায়াত ব্যবস্থায় ধীরগতি নেমে এসেছে। শীতের এই তীব্রতায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, রিকশাচালক ও চরাঞ্চলের নিম্নবিত্ত মানুষ। কাজের সন্ধানে সকালে বের হওয়া শ্রমজীবী মানুষেরা ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে পড়ছেন। শীত নিবারণে অনেককে রাস্তার ধারে খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিতে দেখা গেছে। কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গাছপালা কম থাকায় সেখানে বাতাসের তীব্রতা বেশি, যা শিশু ও বয়স্কদের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠছে।

হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শীতজনিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। হাসপাতালগুলোতে সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসকরা এই সময়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশু ও বয়স্কদের উষ্ণ পোশাক পরিধান এবং খুব ভোরে বা গভীর রাতে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।

শীত মোকাবিলায় সরকারিভাবে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শীতার্ত মানুষের জন্য কম্বল কিনতে জেলার ৯টি উপজেলায় মোট ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া কর্মকর্তাদের মতে, ডিসেম্বরের শুরুতেই এমন আবহাওয়া সামনে শৈত্যপ্রবাহের ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং আগামী কয়েক দিনে কুয়াশার ঘনত্ব ও শীতের তীব্রতা আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।