ইউরোভিশনে ইসরায়েলের অংশগ্রহণ নিয়ে ভোটাভুটির পথে ইবিইউ, বর্জনের হুমকি একাধিক দেশের

২০২৬ সালের ইউরোভিশন সং কনটেস্টে ইসরায়েলের অংশগ্রহণের বিষয়ে ভোটাভুটি হতে পারে। প্রতিযোগিতায় দেশটির ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক এবং বিভিন্ন দেশের বর্জনের হুমকির মুখে ইউরোপিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিয়ন (ইবিইউ) এই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। ৪ ও ৫ ডিসেম্বর ইবিইউ-এর সাধারণ সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে।

সাধারণ সভায় সদস্যরা প্রতিযোগিতার ভোটাভুটি পদ্ধতির সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলো পর্যালোচনা করবেন। গত বছরের প্রতিযোগিতায় ইসরায়েল সরকারের হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠার পর স্বচ্ছতা নিশ্চিতে এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে।

ইউরোভিশন সং কনটেস্টের যোগাযোগ প্রধান ডেভ গুডম্যান বুধবার আনাদোলু এজেন্সিকে জানান, সংস্কারগুলো উদ্বেগ নিরসনে যথেষ্ট কি না, তা সদস্যদের মূল্যায়ন করতে বলা হবে। তিনি বলেন, ‘নতুন আপডেটগুলো যথেষ্ট নয় বলে মনে করলেই কেবল সদস্যরা (ইউরোভিশন সং কনটেস্টে ইসরায়েলের অংশগ্রহণ নিয়ে) ভোট দেবেন।’

গত নভেম্বরে ইবিইউ অসম প্রচার অভিযান, বিশেষ করে সরকার বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের চালানো প্রচারণা রুখতে নতুন নিয়ম ঘোষণা করেছে। এখন থেকে অংশগ্রহণকারী সম্প্রচারক ও শিল্পীরা ফলাফলের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এমন তৃতীয় পক্ষের প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। ইবিইউ সতর্ক করে দিয়েছে যে, ভোটাভুটি অন্যায্যভাবে প্রভাবিত করার যেকোনো চেষ্টা করা হলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

ভিয়েনায় অনুষ্ঠিতব্য ২০২৬ সালের প্রতিযোগিতার জন্য পেমেন্ট মেথড (অনলাইন, এসএমএস বা ফোন) প্রতি একজন ব্যক্তির সর্বোচ্চ ভোটের সংখ্যা ২০ থেকে কমিয়ে ১০ করা হয়েছে। এছাড়া ২০২২ সালের পর প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে পেশাদার বিচারকরা ফিরবেন। এর ফলে জুরি ও সাধারণ মানুষের ভোটের মধ্যে প্রায় ৫০-৫০ ভারসাম্য ফিরে আসবে।

ইসরায়েলের সম্ভাব্য অন্তর্ভুক্তি নিয়ে ইউরোপজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স্পেনের সম্প্রচারক আরটিভিই ঘোষণা করেছে, ইসরায়েলকে বহিষ্কার করা না হলে তারা ২০২৬ সালের প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়াবে। ডাচ সম্প্রচারক এভিআরওটিআরওএস জানিয়েছে, ‘গাজায় চলমান গুরুতর মানবিক বিপর্যয়ের’ কারণে তারা ইসরায়েলের অংশগ্রহণ সমর্থন করতে পারে না। এছাড়া প্রতিযোগিতায় সরকারি হস্তক্ষেপ প্রমাণিত হয়েছে বলেও তারা উল্লেখ করেছে।

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে স্লোভেনিয়ার আরটিভিও সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছে। আইসল্যান্ডের সম্প্রচারক আরইউভি বলেছে, ইসরায়েল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তারা অংশগ্রহণের বিষয়টি ‘পুনর্বিবেচনা’ করবে। তবে তাদের বোর্ড ইতিমধ্যে ইসরায়েলকে বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আয়ারল্যান্ডের আরটিই ঘোষণা করেছে, ইসরায়েলকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলে তারা অংশ নেবে না। গাজার পরিস্থিতির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ‘বিবেচনাবোধহীন’ হবে বলে তারা উল্লেখ করেছে।

তবে কিছু দেশ ইসরায়েলের অব্যাহত অংশগ্রহণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস বলেছেন, ইসরায়েলকে বহিষ্কার করা হলে জার্মানির ইউরোভিশন থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত। তিনি বহিষ্কারের আলোচনাকেও ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। ২০২৬ সালের আয়োজক অস্ট্রিয়ার ওআরএফ-ও ইসরায়েলের অংশগ্রহণকে সমর্থন করে বলেছে, দেশটি প্রতিযোগিতার ‘অবিচ্ছেদ্য অংশ’।

আগামী মে মাসে ভিয়েনায় ২০২৬ সালের ইউরোভিশন সং কনটেস্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।