ডব্লিউএমও: বৈশ্বিক গড়ের দ্বিগুণ গতিতে উত্তপ্ত হচ্ছে আরব বিশ্ব

২০২৪ সালে আরব অঞ্চল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বছর পার করেছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা বাড়ছে, যা চরম আবহাওয়া ও বড় ধরনের সামাজিক-অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ডব্লিউএমও প্রকাশিত ‘স্টেট অফ দ্য ক্লাইমেট ইন দ্য আরব রিজিয়ন’ শীর্ষক প্রথম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে উষ্ণায়নের হার ত্বরান্বিত হয়েছে। এর ফলে দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র দাবদাহ, মারাত্মক খরা এবং ধ্বংসাত্মক বৃষ্টিপাতের ঘটনা ঘটছে। বিশ্বের অন্যতম পানিসঙ্কটপূর্ণ এই অঞ্চলে দ্রুত নগরায়ন, সংঘাত, দারিদ্র্য এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির মতো বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোকে আবহাওয়া পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে।

পশ্চিম এশিয়া ও আরব লীগের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের সহযোগিতায় তৈরি এই প্রতিবেদনটির লক্ষ্য হলো বিশ্বের সবচেয়ে পানিসঙ্কটপূর্ণ ১৫টি দেশের নীতিনির্ধারণে সহায়তা করা।

ডব্লিউএমও-এর মহাসচিব সেলেস্তে সাউলো বলেন, ‘২০২৪ সাল ছিল আরব অঞ্চলের জন্য রেকর্ড করা সবচেয়ে উষ্ণ বছর, যা দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতারই ধারাবাহিকতা। তাপমাত্রা বৈশ্বিক গড়ের দ্বিগুণ হারে বাড়ছে এবং তীব্র দাবদাহ সমাজকে সীমার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের স্বাস্থ্য, বাস্তুতন্ত্র এবং অর্থনীতি ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা দীর্ঘসময় সহ্য করতে পারে না, এটি সামলানো অসম্ভব।’

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৯১-২০২০ সালের গড়ের তুলনায় ২০২৪ সালে এই অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা ১.০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। এ বছর বেশ কয়েকটি দেশে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়। উত্তর আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলে টানা ছয়টি বর্ষা মৌসুম ব্যর্থ হওয়ার পর খরা আরও গভীর হয়েছে। অন্যদিকে সৌদি আরব, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো শুষ্ক দেশগুলোতে চরম বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে।

২০২৪ সালে চরম আবহাওয়ার ঘটনায় প্রায় ৩৮ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মূলত দাবদাহ ও বন্যার কারণে তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে আরব দেশগুলোর প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকা বহু-ঝুঁকি সতর্কীকরণ ব্যবস্থার আওতায় এসেছে, যা বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি হলেও এখনও পর্যাপ্ত নয়।

পশ্চিম এশিয়ার অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের নির্বাহী সচিব রোলা দাস্তি বলেন, ‘আরব অঞ্চল নিয়ে জলবায়ু মডেলগুলোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, উচ্চ মাত্রায় কার্বন নিঃসরণ অব্যাহত থাকলে চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ গড় তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে।’

ডব্লিউএমও জানিয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার ফলে খাদ্য উৎপাদন ও উপকূলীয় শহরগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। তাই বেশ কয়েকটি দেশ লবণাক্ত পানি মিঠা করা, বর্জ্য পানির পুনঃব্যবহার এবং উন্নত সেচ ব্যবস্থার মতো পানি সুরক্ষা পদক্ষেপগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।