শেষ সময় পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার আশায় এনসিপি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে অধিকাংশ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হলেও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখনো সমঝোতার বিষয়ে আশাবাদী। দলটির নেতারা মনে করছেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের চূড়ান্ত সময়সীমা পার হওয়ার আগপর্যন্ত রাজনৈতিক দৃশ্যপটে পরিবর্তন আসতে পারে। বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও আসন সমঝোতা বা নির্বাচনী জোটের সম্ভাবনা দেখছে এনসিপি, যদিও কোনো কিছুই এখনো চূড়ান্ত রূপ পায়নি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব গতকাল শুক্রবার বিকেলে জানান, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যেই ৩০০ আসনে তাদের দলের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। তাঁরা মূলত এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত বিভিন্ন দলের সঙ্গে আসন সমঝোতার পথ খোলা রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ইতোমধ্যেই বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে ২৭২টিতে তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির শীর্ষ নেতাদের জন্য কাঙ্ক্ষিত আসনগুলোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিএনপির ঘোষিত তালিকায় গত বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দ্বিতীয় দফায় ৩৬ জন প্রার্থীর নাম প্রকাশ করা হয়, যার মধ্যে ঢাকা-৯ ও ঢাকা-১৮ আসনও ছিল। গত ৩ নভেম্বর প্রথম দফায় ২৩৭ জনের নাম ঘোষণার সময় এ দুটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছিল। সেই শূন্যস্থান পূরণ হওয়ায় অনেকের ধারণা, বিএনপির সঙ্গে এনসিপির সমঝোতার সুযোগ কার্যত শেষ হয়ে গেছে।

এনসিপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পঞ্চগড়-১, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ঢাকা-৯, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লা-৪ এবং মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ঢাকা–১৮ আসনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ ছাড়া জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬ এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব ঢাকা-১৪ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান।

দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকা-১১ আসন থেকে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক। বাড্ডা, ভাটারা, রামপুরা, হাতিরঝিল থানা (একাংশ) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে এই আসনটি গঠিত। অন্যদিকে, সদস্যসচিব আখতার হোসেন রংপুর-৪ (পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলা) আসনে প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যে দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তবে এসব আসনে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী উভয় দলই তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে।

এদিকে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন জানিয়েছেন, একক নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি জোট বা সমঝোতা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। জামায়াতসহ সমমনা ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গেও দলটির অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। নীতিনির্ধারকেরা এ ধরনের জোট বা সমঝোতার সম্ভাব্য লাভ-ক্ষতি বিশ্লেষণ করছেন। গত ১০ অক্টোবর নির্বাহী কাউন্সিলের এক সভায় নেতাদের একটি অংশ জামায়াতের সঙ্গে জোটে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিল।

এর বাইরে গত নভেম্বর মাসের শেষ দিকে একটি ভিন্ন রাজনৈতিক জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে এনসিপির এই জোট হওয়ার কথা ছিল। গত ২৭ নভেম্বর রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে এই নতুন জোটের আত্মপ্রকাশের কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা ভেস্তে যায়।

প্রস্তাবিত ওই জোটে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের একটি অংশের গঠিত প্ল্যাটফর্ম ‘আপ বাংলাদেশ’ (ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ)-কে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হলে এনসিপি নেতারা তার বিরোধিতা করেন। এ ছাড়া গণঅধিকার পরিষদের অভ্যন্তরীণ মতভেদও জোট না হওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখে। গতকাল শুক্রবার দুটি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই জোট গঠনের সম্ভাবনা বর্তমানে নেই বললেই চলে।

প্রথম আলো অবলম্বনে