জামায়াত আমির: আগামী নির্বাচনে জনগণ লাল কার্ড দেখাতে প্রস্তুত

বাংলাদেশের জনগণ আগামী নির্বাচনে রাজনীতির মাঠে ‘লাল কার্ড’ দেখানোর জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তার মতে, যারা এতদিন নির্বাচনের নাম করে জনগণকে বেহুঁশ করে রেখেছিল, এখন তাদের কারও কারও কণ্ঠে ভিন্ন সুর শোনা যাচ্ছে। তিনি বলেন, জনগণ বুঝতে পেরেছে যে তারা কী ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।

সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে শনিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পৃথকভাবে গণভোট আয়োজনসহ মোট পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা দলগুলো এই সমাবেশের আয়োজন করে।

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে জামায়াত আমির বলেন, একদল চাঁদাবাজির কারণে মানুষের ঘৃণা কুড়িয়েছে, আর অন্য দল এখন তার চেয়েও বেশি শক্তি নিয়ে চাঁদাবাজিতে নেমেছে। জনগণ দখলদারদের প্রত্যাখ্যান করার পরও আরেকটি দল বেপরোয়া দখলদার হয়ে উঠেছে। তিনি অভিযোগ করেন, একদল মানুষের জানমাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে এবং অন্য দলও এখন একই পথে হাঁটছে। এমনকি নিজেদের মধ্যে মারামারি ও কোন্দলে তারা নিজেরাই শেষ হয়ে যাচ্ছে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘অপকর্মের’ দায় নিয়ে ফ্যাসিস্টরা দেশ ছেড়ে পালালেও ফ্যাসিজমের কালো ছায়া এখনো বাংলাদেশ থেকে যায়নি। প্রশাসনিক ক্যু-এর মাধ্যমে বাঁকা পথে যারা নির্বাচনের কৃতিত্ব হাইজ্যাক করার চিন্তা করছেন, তাদের সেই সুযোগ আর নেই। বাংলাদেশ থেকে অপশাসন দূর হয়ে নতুন সূর্যের উদয় হবে। সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এত রক্ত ও ত্যাগের পর মানুষ আশা করেছিল রাজনীতিবিদেরা অতীতের পরিণতি থেকে শিক্ষা নেবেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে একদল সেই পুরোনো ধারাতেই পড়ে আছে এবং সংস্কার বা গণভোটের বিরোধিতা করছে।

সমাবেশে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, গত ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্রযন্ত্রের জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ইসলামপন্থীরা। এ দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বিদেশি আধিপত্যবাদী শক্তির ক্রীড়নকদের হাতে অনেকে নিগৃহীত ও কারানির্যাতিত হয়েছেন, এমনকি ফাঁসিও বরণ করেছেন। তবুও অন্যায়ের সামনে তারা মাথা নত করেননি। তিনি সতর্ক করে বলেন, জুলাই সনদের বিপক্ষে যারা অবস্থান নেবে, জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।

নির্বাচন ও সংস্কার প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, যারা ৫৩ বছর ধরে মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিল, আজ তারা নিজেরাই নিজেদের কাছে নিরাপদ নয়। সংস্কার ও দৃশ্যমান বিচারে বাধা সৃষ্টি করে নির্বাচন পেছানোর জন্য তারা পাগল হয়ে গেছে। তিনি হুঁশিয়ারি দেন যে, কোনো ধরনের ‘শয়তানি পরিকল্পনা’ করলে তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন।

আট দলের বাইরে থাকা অন্য ইসলামি দলগুলোকে জোটে আসার আহ্বান জানান জামায়াতের আমির। তিনি সব মোহ ত্যাগ করে ‘নিজেদের আঙিনায়’ ফিরে আসার অনুরোধ করেন। একইসঙ্গে তিনি বলেন, ইসলামি ও দেশপ্রেমিক নেতারা কারও রক্তচক্ষুকে ভয় পায় না। বিশ্বের সব শান্তিকামী দেশকে সম্মান জানানো হবে, কিন্তু বাংলাদেশে কেউ ‘দাদাগিরি’ করতে চাইলে তা বরদাশত করা হবে না।

শনিবার দুপুর ১২টা থেকেই হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশস্থল মুখর হয়ে ওঠে। খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাছিতের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ইসলামী ঐক্যজোটের আমির মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির সরওয়ার কামাল আজিজী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামীর সিলেট জেলার আমির হাবিবুর রহমান প্রমুখ। বিকেল চারটার দিকে শেষ হওয়া এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে দেশজুড়ে আট দলের বিভাগীয় কর্মসূচি সমাপ্ত হয়।