আটকের একদিনের মাথায় বহিষ্কৃত যুবদল নেতার মৃত্যু

যশোরে যৌথবাহিনীর অভিযানের পর আটক হওয়ার মাত্র একদিনের মাথায় এক নেতার মৃত্যু হয়েছে। কারাগার থেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হচ্ছিল এবং বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন বিদ্যমান ছিল।

নিহত ওই ব্যক্তির নাম ওয়ালিউর রহমান ওরফে উজ্জ্বল বিশ্বাস। তিনি কেশবপুর উপজেলার আলতাপোল গ্রামের নাজির বিশ্বাসের সন্তান। উজ্জ্বল বিশ্বাস একসময় পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। তবে গত ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন অভিযোগ ওঠায় তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল বলে নিশ্চিত করেছেন যশোর জেলা যুবদলের সদস্য সচিব আনসারুল হক রানা। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে তার মৃত্যু হয়।

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আবিদ আহমেদ জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে যখন উজ্জ্বলকে কারাগারে আনা হয়, তখনই তিনি অসুস্থ ছিলেন। তার কাগজপত্রে ‘গণপিটুনির শিকার হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ ছিল। কারাগারে প্রবেশের সময় সাধারণ জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বাভাবিক উত্তর দিলেও তার ‘ইন্টারনাল হ্যামারেজ’ বা অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। রাত সাড়ে ১০টার দিকে অবস্থার অবনতি হলে তাকে দ্রুত যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার প্রায় ১৫ মিনিট পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তবে পরিবারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছে। উজ্জ্বলের ভাই এবং কেশবপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আফজাল হোসেন বাবু দাবি করেছেন, অভিযানের সময় তাদের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। তার অভিযোগ, ‘বৃহস্পতিবার গভীর রাতে যৌথবাহিনীর সদস্যরা বাড়িতে প্রবেশ করে উজ্জ্বলকে হাত-পা বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। ভোর রাত ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এই নির্যাতন চলে এবং তাকে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। বাড়িতে তল্লাশি করে কিছু না পেলেও থানায় নিয়ে অস্ত্র ও মাদকের মামলা দেওয়া হয়েছে।’

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে কেশবপুরে অভিযান চালিয়ে উজ্জ্বলসহ মোট চারজনকে আটক করে যৌথবাহিনী। পুলিশ জানিয়েছে, আটককৃতদের কাছ থেকে বিদেশি পিস্তল, ধারালো অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। আটক অন্য ব্যক্তিরা হলেন—নতুন মূলগ্রামের মফিজুর রহমানের ছেলে রাসেল, কেশবপুর পৌর শহরের ভোগতি নরেন্দ্রপুর এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন পলাশ এবং তার ভাই আলম। শুক্রবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।

পরিবারের অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে পুলিশ প্রশাসন। যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবুল বাশার জানিয়েছেন, অভিযানের পর আসামিদের পুলিশের কাছে যথাযথভাবে হস্তান্তর করা হয় এবং এরপর পুলিশ বাদী হয়ে চার আসামির নামে মামলা দায়ের করে। পরিবারের দাবিকে তিনি সঠিক নয় বলে অভিহিত করেছেন। এদিকে ঘটনার পর শনিবার সকাল থেকেই নিহতের স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীরা হাসপাতালের মর্গে ভিড় করেন এবং এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।