গাজার ‘ইয়েলো লাইনে’ আন্তর্জাতিক বাহিনী চায় মিশর

গাজার তথাকথিত ‘ইয়েলো লাইন’ বা হলুদ রেখা বরাবর দ্রুত আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েনের আহ্বান জানিয়েছেন মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেল আতি। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি চুক্তি সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে কি না, তা যাচাই করার জন্যই এই বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।

শনিবার দোহা ফোরাম ২০২৫-এর এক অধিবেশনে তিনি এই মন্তব্য করেন। যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় ইসরায়েল এখনো গাজার ৫০ শতাংশেরও বেশি ভূখণ্ড দখল করে আছে। এই ইয়েলো লাইন মূলত ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অবস্থান এবং ফিলিস্তিনিদের চলাচলের অনুমোদিত এলাকার মধ্যে বিভাজন রেখা হিসেবে কাজ করছে।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক কেন প্রয়োজন, তার ব্যাখ্যায় মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘একটি পক্ষ, অর্থাৎ ইসরায়েল প্রতিদিনই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে এবং দাবি করছে যে অপর পক্ষ তা লঙ্ঘন করছে।’ তিনি জানান, মিশর ‘শান্তি-প্রয়োগকারী’ (পিস-এনফোর্সিং) ম্যান্ডেটের বদলে ‘শান্তি রক্ষা’ (পিস-কিপিং) কার্যক্রমের পক্ষে। ট্রাম্প শান্তি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে যাওয়ার আগে যুদ্ধবিরতিকে স্থিতিশীল করার ওপরও তিনি জোর দেন।

শীর্ষ এই কূটনীতিক বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের উচিত নিজেদের বিষয়গুলো নিজেরাই পরিচালনা করা।’ তিনি আরও বলেন, ‘গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) পূর্ণ ক্ষমতায়ন ও মোতায়েন না হওয়া পর্যন্ত গাজা ও পশ্চিম তীর স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।’ তার মতে, ‘ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েল বা মধ্যপ্রাচ্যের জন্য কোনো সমাধান কিংবা টেকসই নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নেই... এটি ছাড়া বাকি সব সমাধানই হবে সাময়িক।’

রাফাহ ক্রসিং সম্পর্কে তিনি জানান, মিশরের দিক থেকে এটি ২৪ ঘণ্টাই খোলা রয়েছে, কিন্তু ইসরায়েল গাজার দিকের গেট বন্ধ করে রেখেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, মিশর এই ক্রসিংকে ‘বাস্তুচ্যুত করার বা মানুষকে তাদের স্বদেশ থেকে বের করে দেওয়ার দরজা’ হিসেবে ব্যবহার করতে দেবে না। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার কোনো নৈতিক বা মানবিক যৌক্তিকতা নেই... আমরা কেবল তাদেরই প্রবেশের অনুমতি দিতে পারি যারা আহত এবং বাইরে চিকিৎসার প্রয়োজন।’

আবদেল আতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গাজায় মানবিক ও চিকিৎসা সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শীত ঘনিয়ে আসছে এবং মানুষের কোনো আশ্রয় নেই, তাই দ্রুত পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। পশ্চিম তীরের পরিস্থিতিকে তিনি গাজার চেয়েও খারাপ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি উল্লেখ করেন, বেসামরিক নাগরিকদের আতঙ্কিত করতে এবং জনসংখ্যা স্থানান্তরের উদ্দেশ্যে সেখানে প্রতিদিন বসতি স্থাপনকারীরা হামলা চালাচ্ছে।

গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহতের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৭১ হাজার। জাতিসংঘ প্রস্তাব ২৮০৩-এর আওতায় যুদ্ধবিরতি ও অন্তর্বর্তীকালীন শাসন ব্যবস্থাকে সহায়তা করতে একটি ‘বোর্ড অব পিস’, আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) এবং একটি নতুন প্রশাসনিক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গাজার সরকারি কর্তৃপক্ষের মতে, ১০ অক্টোবর চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল শত শত বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে এবং ৩৬৬ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। চুক্তির প্রথম ধাপে ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়াও এই পরিকল্পনায় গাজা পুনর্গঠন এবং হামাসবিহীন একটি নতুন শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।