অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার নিয়ে সন্তুষ্ট ৪১ শতাংশ, দায় নিয়েও প্রশ্ন

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক একটি জরিপে উঠে এসেছে যে, সরকারের সংস্কার কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ৪১ শতাংশের বেশি মানুষ, যেখানে অসন্তুষ্ট মানুষের হার প্রায় ৩৭ শতাংশ। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিমেকারস কনসাল্টিং লিমিটেড-এর সহায়তায় এই জরিপটি পরিচালনা করেছে প্রথম আলো।

সংস্কার কার্যক্রমে পুরোপুরি সফল না হওয়ার দায় কার, এমন প্রশ্নেও উঠে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা মনে করেন, এই ব্যর্থতার জন্য খোদ অন্তর্বর্তী সরকারই দায়ী। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ সংস্কারে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না আসার পেছনে সরকারকেই দায়ী করেছেন। এছাড়া এক-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ মনে করেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগীরা সংস্কার কাজে বাধা সৃষ্টি করেছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা নিয়েও নিজস্ব মতামত দিয়েছেন উত্তরদাতারা। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২২ শতাংশ মনে করেন, সংস্কারে প্রতিবন্ধকতার জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দায়ী। একই সঙ্গে ২০ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ বিএনপিকে এবং ৭ শতাংশ মানুষ জামায়াতে ইসলামীকে সংস্কার কার্যক্রমে বাধার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, পুলিশ ও বিচারব্যবস্থাসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে সংস্কারে সরকারের সফলতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। অর্ধেকের বেশি মানুষ মনে করেন, পুলিশ (৫৮ শতাংশ), বিচারব্যবস্থা (৫৬ শতাংশ), প্রশাসন (৫৬ শতাংশ) এবং আর্থিক খাতের (৫২ শতাংশ) সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার সফল হতে পারেনি। অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রে এখনো কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি বলে মত দিয়েছেন তারা।

তবে বেশ কিছু খাতে সাফল্যের চিত্রও জরিপে উঠে এসেছে। নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার বিষয়ে ৪৭ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ সরকারকে সফল মনে করছেন। এছাড়া কৃষিতে ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশ, শিল্প ও বিনিয়োগে ৪৫ দশমিক ২ শতাংশ এবং খেলাধুলা ও সংস্কৃতিতে ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ সরকারের কাজে সন্তুষ্ট। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, স্থানীয় সরকার এবং পররাষ্ট্রনীতিতেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ সাফল্য দেখছেন।

সন্তুষ্টির মাত্রার বিস্তারিত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮ দশমিক ৬ শতাংশ উত্তরদাতা সংস্কার নিয়ে ‘অত্যন্ত সন্তুষ্ট’ এবং ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ ‘কিছুটা সন্তুষ্ট’। সব মিলিয়ে ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। অন্যদিকে ১১ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ ‘খুবই অসন্তুষ্ট’ এবং ২৫ দশমিক ১ শতাংশ ‘কিছুটা অসন্তুষ্ট’। বাকি ২১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট—কোনো পক্ষেই স্পষ্টভাবে মত দেননি।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর, ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস-এর নেতৃত্বে এই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। দায়িত্ব গ্রহণের পর ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা সংস্কারের ওপর বিশেষ জোর দিয়েছিলেন। সরকার গঠনের পর থেকেই বিভিন্ন খাতে পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এই জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে গত ২১ থেকে ২৮ অক্টোবর সময়ের মধ্যে। দেশের ৫টি নগর এবং ৫টি গ্রাম বা আধা শহর এলাকার ১ হাজার ৩৪২ জন প্রাপ্তবয়স্ক (১৮-৫৫ বছর) মানুষের ওপর এই জরিপ চালানো হয়। জরিপকারী প্রতিষ্ঠানের মতে, এটি একটি প্রতিনিধিত্বমূলক জরিপ, যার নির্ভরযোগ্যতার মাত্রা ৯৯ শতাংশ এবং এতে বিভিন্ন আয় ও পেশার মানুষের মতামত প্রতিফলিত হয়েছে।