যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে ৪০ দেশের নাগরিকদের জন্য কঠোর হচ্ছে শর্ত

যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে ইচ্ছুক পর্যটকদের জন্য নিয়মনীতি আরও কঠোর করার পরিকল্পনা করছে দেশটির প্রশাসন। নতুন একটি প্রস্তাবনা অনুযায়ী, দেশটিতে প্রবেশের শর্ত হিসেবে পর্যটকদের গত পাঁচ বছরের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তারিত ইতিহাস বা সোশ্যাল মিডিয়া হিস্ট্রি জমা দিতে হতে পারে। বিশেষ করে যারা ভিসা ছাড়া ভ্রমণের সুবিধা পান, তাদের লক্ষ্য করেই এই কড়াকড়ি আরোপের চিন্তা করা হচ্ছে।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট (ডিএইচএস) এবং কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি) যৌথভাবে এই প্রস্তাবনার দলিল জমা দিয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি জার্নাল ফেডারেল রেজিস্টারে প্রকাশিত হয়েছে। প্রস্তাবনাটি কার্যকর হলে যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সসহ প্রায় ৪০টি দেশের নাগরিকদের এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। বর্তমানে এসব দেশের নাগরিকরা কোনো ভিসা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে ৯০ দিন পর্যন্ত অবস্থানের সুযোগ পান।

নতুন দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে, ইলেকট্রনিক সিস্টেম ফর ট্রাভেল অথরাইজেশন (ইস্টা) ফরম পূরণ করার সময় আবেদনকারীদের গত পাঁচ বছরের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের তথ্য দিতে হবে। শুধু তাই নয়, গত পাঁচ বছরের টেলিফোন নম্বর এবং ১০ বছরের ই-মেইল ঠিকানাও চাওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর পাশাপাশি আবেদনকারীর পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কেও বাড়তি তথ্য সংগ্রহ করার কথা বলা হয়েছে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার ঠিক কোন ধরনের তথ্য প্রয়োজন হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

প্রস্তাবনাটি নিয়ে এরই মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ডিজিটাল অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ইলেকট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনের সোফিয়া কোপ নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, সরকারের এই পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ হতে পারে। অন্যদিকে ইমিগ্রেশন ল প্র্যাকটিস ফ্র্যাগোমেন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, এই ব্যাপক যাচাই-বাছাইয়ের কারণে ইস্টা অনুমোদন পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে।

এদিকে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। পর্যটন খাতে এই কড়াকড়ির নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। বুধবার ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ভালো করছি। আমরা শুধু চাই মানুষ এখানে আসুক এবং নিরাপদে থাকুক। আমরা নিরাপত্তা ও সুরক্ষা চাই। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, ভুল ব্যক্তিদের দেশে ঢুকতে দিচ্ছি না।’

পর্যটকদের তথ্য সংগ্রহের এই নতুন প্রস্তাবনাটি বর্তমানে ৬০ দিনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে, যাতে জনগণ তাদের মতামত জানাতে পারে। সিবিপির এক মুখপাত্র বিবৃতিতে স্পষ্ট করেছেন যে, এটি এখনই চূড়ান্ত কোনো নিয়ম নয়। বরং আমেরিকার জনগণকে নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে নতুন নীতিমালার বিকল্পগুলো নিয়ে আলোচনার এটি একটি প্রাথমিক ধাপ মাত্র। তবে বর্তমান সরকার জাতীয় নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

আগামী কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বড় ধরনের ক্রীড়া ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। মেক্সিকো ও কানাডার সঙ্গে যৌথভাবে পুরুষ ফুটবল বিশ্বকাপ এবং ২০২৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে অলিম্পিক আয়োজনের কথা রয়েছে। ফলে দেশটিতে বিদেশি পর্যটকদের ঢল নামবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিশ্ব ভ্রমণ ও পর্যটন পরিষদ সতর্ক করেছে যে, ২০২৫ সালে ১৮৪টি অর্থনীতির মধ্যে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই আন্তর্জাতিক দর্শনার্থীদের ব্যয় হ্রাস পেতে পারে। ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রতিবাদে অনেক কানাডিয়ান ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ বয়কট করছেন।

নিরাপত্তা শঙ্কার প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প প্রশাসন এর আগেও বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপের কথা জানিয়েছিল। বিদেশি শিক্ষার্থী বা দক্ষ কর্মীদের (এইচ-১বি) ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রেও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট যাচাইয়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, আবেদনকারী ও তাদের পরিবারের অনলাইন উপস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্য গোপন করলে ভিসা প্রত্যাখ্যানের ঝুঁকি থাকবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনার জেরে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের ১৯টি দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সম্প্রসারিত হতে পারে বলে কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন।