ফিরল পুরনো সীমানা: ফরিদপুর, বাগেরহাট ও গাজীপুরের আসনে পরিবর্তন

আদালতের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের তিনটি জেলার সংসদীয় আসনের সীমানা ও সংখ্যায় পরিবর্তন এসেছে। উচ্চ আদালতের রায়ের ফলে ফরিদপুর-৪ আসনে ফিরেছে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন। অন্যদিকে আইনি লড়াই শেষে বাগেরহাট ও গাজীপুর জেলার আসন সংখ্যা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ফরিদপুর সংক্রান্ত রায়টি দেন। রায়ে ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করে নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত গেজেটকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আগের গেজেট বাতিল করে ইউনিয়ন দুটিকে পুনরায় ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসনে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। তিনি জানান, এই রায়ের মাধ্যমে ভাঙ্গা উপজেলার ইউনিয়ন দুটি তাদের মূল সংসদীয় আসনে ফিরে এল। এর আগে ফরিদপুর-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মো. শহিদুল ইসলাম বাবুল ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহবুবুর রহমান দুলালসহ পাঁচজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি রিটটি দায়ের করেছিলেন। উল্লেখ্য, ইসি এর আগে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দা উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করলে ভাঙ্গায় ব্যাপক বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ এবং সরকারি অফিসে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছিল।

অন্যদিকে, আদালতের চূড়ান্ত রায়ের পর বৃহস্পতিবার রাতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বাগেরহাট ও গাজীপুরের আসন বিন্যাস নিয়ে সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এর ফলে বাগেরহাট জেলায় একটি আসন বেড়ে মোট চারটি এবং গাজীপুর জেলায় একটি আসন কমে মোট পাঁচটি আসন বহাল রইল। গত ৪ সেপ্টেম্বর ইসি ৩০০ আসনের যে গেজেট প্রকাশ করেছিল, তাতে বাগেরহাটের আসন কমিয়ে তিনটি এবং গাজীপুরের আসন বাড়িয়ে ছয়টি করা হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বাগেরহাট প্রেসক্লাব, জেলা আইনজীবী সমিতি, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন সংগঠন হাইকোর্টে রিট করে।

রিটের শুনানি শেষে গত ১০ নভেম্বর বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার ও বিচারপতি ফয়সাল হাসান আরিফের হাইকোর্ট বেঞ্চ ইসির ওই গেজেট অবৈধ ঘোষণা করে বাগেরহাটের চারটি আসন বহাল রাখার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশন এবং গাজীপুরের কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন। ১০ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। সর্বোচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে ইসি বাধ্য হয়ে সীমানার গেজেট সংশোধন করে আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।

নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বাগেরহাট সদর, চিতলমারী ও মোল্লাহাট নিয়ে গঠিত হয়েছে বাগেরহাট-১ আসন; ফকিরহাট, রামপাল ও মোংলা নিয়ে বাগেরহাট-২; কচুয়া, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা নিয়ে বাগেরহাট-৩ এবং মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা নিয়ে বাগেরহাট-৪ আসন গঠিত হবে। অর্থাৎ সীমানা পুনর্বিন্যাসের আগের কাঠামোই কার্যকর থাকছে।

সীমানা নির্ধারণ নিয়ে আদালতের এখতিয়ার এবং নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আদালতে মামলা করা যায় না, এটা নিয়ে বলার এখতিয়ার বোধহয় আমার নেই। আদালত যদি কগনিজেন্স নিয়ে থেকে থাকেন, আদালতে নিশ্চয় বলা হচ্ছে। তারপরও যদি আদালত বিবেচনায় না নেন... রায়গুলো ক্ষমতাকে খর্ব করছে কি না যদি বলেন, এক অর্থে একটা প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থানে আছে।’ তিনি আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, তাদের ক্ষমতা বাতিল হচ্ছে না, তবে বিষয়টি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে বা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।