হাদিকে গুলির প্রতিবাদে শনিবার বিএনপির বিক্ষোভ, হামলাকারীদের ‘চরম মূল্য’ দেওয়ার হুঁশিয়ারি

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলির প্রতিবাদে আগামীকাল শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে নির্বাচনী প্রচারণা ও জুমার নামাজ শেষে ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন এই তরুণ রাজনীতিক।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মশালায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচনের আগে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নস্যাৎ করতে নীলনকশা অনুযায়ী ধারাবাহিক হামলা চালানো হচ্ছে। ওসমান হাদির ওপর হামলা তারই অংশ। এর আগেও দেড় মাস আগে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদুল্লাহকে গুলি করে আহত করার বিষয়টি উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘এসব হামলার সঙ্গে কারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতেই বিএনপি সারাদেশে বিক্ষোভ করবে।’

ঘটনার বিবরণ দিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, শুক্রবার দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে একটি মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। ওই সময় হাদির পেছনের রিকশায় থাকা প্রত্যক্ষদর্শী মো. রাফি জানান, জুমার নামাজ শেষে তারা হাইকোর্টের দিকে আসছিলেন। বিজয়নগর এলাকায় পৌঁছামাত্রই মোটরসাইকেল আরোহীরা এই হামলা চালায়। ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য মো. সারোয়ার ও ইসরাফিল জানান, শুক্রবার সকালে হাদি তার কর্মীদের নিয়ে ঢাকা-৮ আসনের বিভিন্ন মসজিদে প্রচারণা চালিয়েছেন। প্রচারণা শেষে একসঙ্গে দুপুরের খাবার খাওয়ার কথা থাকলেও হাদি একাই একটি মসজিদে যান এবং ফেরার পথেই আক্রান্ত হন।

গুরুতর আহত অবস্থায় দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে হাদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোস্তাক আহমেদ জানিয়েছেন, ভর্তির সময় হাদির অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক ছিল এবং তাকে সিপিআর দেওয়া হয়। তার মাথার ভেতরে ও কানের পাশে গুলি লেগেছে। বর্তমানে রক্তচাপ কিছুটা স্থিতিশীল হলেও শঙ্কা কাটেনি। খবর পেয়ে বিকেল ৪টার দিকে হাসপাতালে ছুটে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা-৮ আসনে হাদির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মির্জা আব্বাস। এছাড়া বিকেল ৫টার দিকে হাদিকে দেখতে যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দুষ্কৃতকারীদের খুঁজে বের করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে ছাত্রদলসহ দলীয় নেতাকর্মীদের পুলিশকে সহযোগিতা করার নির্দেশ দেন।

এদিকে এই ঘটনায় কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘গণহত্যার দায়ে কনভিকটেড হাসিনা ভারতে বসে একের পর এক খুনের হুমকি দিচ্ছিল। হাদি বহুবার ভারতীয় নম্বর থেকে খুনের হুমকি পেয়েছে। যারাই এটা ঘটাক, এটার মূল্য তাদের দিতে হবে।’ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসও ঘটনার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিনই একজন এমপিপার্থীর ওপর প্রকাশ্যে গুলি চালানোর ঘটনা নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, গত ১৩ নভেম্বর হাদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছিলেন যে ৩০টি বিদেশি নম্বর থেকে তাকে হত্যা এবং তার পরিবারের সদস্যদের ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন তার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘পতিত ফ্যাসিবাদ মোকাবিলায় সরকারের দুর্বলতা সুস্পষ্ট। শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রচারণা চালাতে গেলে তাদের নিরাপত্তা কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’

বিএনপি ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, হাদির ওপর হামলার ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার দাবিতে শনিবার ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলো বিক্ষোভ মিছিল করবে।