আকাশচুম্বী দাম ও সমালোচনার পরও বিশ্বকাপ টিকিটের আবেদনে রেকর্ড

আগামী ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের তৃতীয় ধাপের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। আকাশচুম্বী দাম নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও টিকিট সংগ্রহের লড়াইয়ে ভাটা পড়েনি। ফিফা জানিয়েছে, টিকিট উইন্ডো খোলার প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ৫০ লাখেরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে। আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে অনুষ্ঠেয় এই আসরের টিকিট পেতে বিশ্বের দুই শতাধিক দেশের সমর্থকরা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হলো, গ্রুপ পর্বের টিকিট চাহিদায় আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলের ম্যাচকে পেছনে ফেলেছে পর্তুগাল ও কলম্বিয়ার লড়াই। আগামী ২৭ জুন মায়ামিতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোদের এই ম্যাচটি দেখার জন্য এখন পর্যন্ত সর্বাধিক আবেদন জমা পড়েছে। এরপরই চাহিদার শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল বনাম মরক্কো, মেক্সিকো বনাম সৌদি আরব, ইকুয়েডর বনাম জার্মানি এবং স্কটল্যান্ড বনাম ব্রাজিল ম্যাচগুলো। ফিফার তথ্যমতে, তিনটি আয়োজক দেশের পর কলম্বিয়া, ইংল্যান্ড, ইকুয়েডর, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা এবং জার্মানির মতো দেশগুলো থেকে টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে।

টিকিট বণ্টনের ক্ষেত্রে ‘র‌্যান্ডম সিলেকশন ড্র’ পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় সমর্থকরা নির্দিষ্ট ম্যাচ ও টিকিটের ক্যাটাগরি বাছাই করে আবেদন করতে পারছেন। তবে সবাই টিকিট পাবেন না; আবেদনকারীদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে লটারির মাধ্যমে। যাদের আবেদন গৃহীত হবে, তাদের আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইমেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে এবং টিকিটের মূল্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হবে। ফিফার ঘোষণা অনুযায়ী, এই পর্যায়ের টিকিট বিক্রি আগামী বছরের ১৩ জুন পর্যন্ত চলবে।

তবে টিকিটের মূল্য কাঠামো নিয়ে ইউরোপীয় সমর্থকগোষ্ঠীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সাত বছর আগে বিডিংয়ের সময় যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে সর্বনিম্ন ২১ ডলার টিকিটের কথা বলা হয়েছিল। অথচ বর্তমানে সেই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। ফিফা গ্রুপ পর্বে সর্বনিম্ন ৬০ ডলারের (প্রায় ৭ হাজার ৩১৮ টাকা) কথা জানালেও, জার্মান সকার ফেডারেশনের প্রকাশিত তালিকায় দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। তাদের তথ্যমতে, গ্রুপ পর্বে সর্বনিম্ন টিকিটের দাম ১৮০ ডলার (প্রায় ২২ হাজার টাকা) থেকে ৭০০ ডলার পর্যন্ত নির্ধারিত হয়েছে। আর ফাইনাল ম্যাচের টিকিটমূল্য ৪,১৮৫ ডলার (প্রায় ৫ লাখ ১১ হাজার টাকা) থেকে শুরু করে ৮,৬৮০ ডলার (১০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা) পর্যন্ত ঠেকেছে। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের তুলনায় এই দাম প্রায় তিনগুণ বেশি।

বিশ্বকাপ টিকিটের এই উচ্চমূল্যকে ফুটবল সাপোর্টার্স ইউরোপ (এফএসই) ‘বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণা’ হিসেবে অভিহিত করেছে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক রোনান ইভেইন মন্তব্য করেছেন, ‘ফিফা নির্ধারিত মূল্যতালিকা দেখে আমরা হতবাক। টুর্নামেন্ট থেকে পকেট ভারী করার এই চেষ্টা অব্যাহত থাকলে ফুটবল সংস্কৃতি ঝুঁকির মুখে পড়বে।’ অন্যদিকে ফুটবল সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (এফএসএ) একে ‘লজ্জাজনক’ আখ্যা দিয়েছে। ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ) বিষয়টি নিয়ে ফিফার কাছে সমর্থকদের উদ্বেগ তুলে ধরার এবং লবিং করার কথা জানিয়েছে।

৪৮ দলের এই মেগা টুর্নামেন্ট শুরু হবে আগামী বছরের ১১ জুন এবং পর্দা নামবে ১৯ জুলাই। সমর্থকদের সমালোচনার বিষয়ে ফিফা সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি। বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ এই সংস্থাটি মনে করছে, টিকিটের এই বিপুল চাহিদা প্রমাণ করে যে বিশ্বজুড়ে আসরটি নিয়ে উন্মাদনা অসাধারণ পর্যায়ে পৌঁছেছে।