হাদির ওপর হামলা: অভিযুক্তরা কীভাবে নিরাপত্তা এড়িয়ে দেশ ছাড়ল!

ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিদ হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত দুই প্রধান সন্দেহভাজন নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারি এড়িয়ে স্থলপথে ভারত পালিয়ে গেছে বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মনে করছে। যদিও এখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের দেশত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।

তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, হামলার মূল দুই অভিযুক্ত- ফয়সাল করিম মাসুদ ও মো. আলমগীর শেখ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে পালিয়ে গেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, হাদিকে ফয়সাল কাছ থেকে গুলি চালায় এবং আলমগীর মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন।

একটি তদন্তসূত্র জানায়, শুক্রবার বিকেলে বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট রোডে হামলার পর তারা মোটরসাইকেলে করে নয়া পল্টন, শাহবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট ও আগারগাঁও হয়ে মিরপুরে পৌঁছায়। সেখানে মোটরসাইকেল রেখে তারা একটি প্রাইভেটকারে উঠে আশুলিয়া ও গাজীপুর হয়ে ময়মনসিংহের দিকে রওনা দেয়।

ময়মনসিংহে পৌঁছে গাড়িটি পরিত্যাগ করার পর তারা আরেকটি প্রাইভেটকারে ওঠে। পরে হালুয়াঘাটের কাছে ধারাবাজার এলাকার একটি পেট্রলপাম্পে আবার গাড়ি বদলায়। সেখান থেকে দুই মোটরসাইকেলে তিন যুবকের সহায়তায় তারা ভুটিয়াপাড়া পৌঁছে রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে। এরপর মানবপাচার চক্রের সহায়তায় সীমান্ত পার হয়।

অন্য একটি তদন্তসূত্র জানায়, হামলার পর তারা মোটরসাইকেলে মোহাম্মদপুর ও উত্তরা হয়ে সাভারের হেমায়েতপুরে যায়। সেখানে মোটরসাইকেল রেখে প্রাইভেটকারে ময়মনসিংহে পৌঁছে একটি রিসোর্টে প্রায় ৩০ মিনিট অবস্থান করে পোশাক পরিবর্তন করে। রাত ১১টার দিকে তারা হালুয়াঘাটের উদ্দেশে রওনা দিয়ে পূর্বপরিকল্পিত যোগাযোগের মাধ্যমে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে।

তদন্তে সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, হামলার আগেই সীমান্ত পার হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব লজিস্টিক ব্যবস্থা করে রেখেছিল ফয়সাল ও আলমগীর। হামলার মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যেই তারা নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী হালুয়াঘাট সীমান্তে পৌঁছে যায়।

অভিযোগ রয়েছে, গারো সম্প্রদায়ের মানবপাচারকারী ফিলিপ স্নাল তাদের সীমান্ত পার হতে সহায়তা করেন। অভিযানে পুলিশ ও বিজিবি কাউকে আটক করতে না পারলেও তদন্তকারীরা মনে করছেন, ফিলিপ স্নালও অভিযুক্তদের সঙ্গে ভারত পালিয়ে থাকতে পারেন। ফয়সাল, আলমগীর ও ফিলিপ স্নাল এখনো পলাতক থাকলেও সীমান্ত পার হতে সহায়তার অভিযোগে চারজনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাত আনুমানিক ১১টার দিকে ডিএমপির রমনা বিভাগের একটি দল শেরপুরের নালিতাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে সঞ্জয় চিসিম ও সিবিরুন দিও নামের দুই ব্যক্তিকে আটক করে ঢাকায় নিয়ে আসে। এর আগে দলটি হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।

জিজ্ঞাসাবাদে সঞ্জয় চিসিম জানান, শুক্রবার রাত ১টা ৩০ মিনিট থেকে ২টার মধ্যে তিনি দুই বাংলাদেশিকে ভারতে পাচারে সহায়তা করেন। তিনি দাবি করেন, ওই দুই ব্যক্তি বর্তমানে ফিলিপ স্নাল ও তার সহযোগীদের সঙ্গে রয়েছে।

এদিকে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম এক খুদে বার্তায় জানান, মানবপাচারে সহায়তার অভিযোগে শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্ত এলাকা থেকে বেঞ্জামিন চিরাং (৪৫) ও শিশাল (২৮) নামে আরও দুই সহযোগীকে আটক করা হয়েছে। হামলার ঘটনার পর থেকে সীমান্তজুড়ে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে বলেও জানান তিনি।

তবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, তদন্তে অভিযুক্তদের ভারত পালিয়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেলেও বিষয়টি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।