১২ ফেব্রুয়ারি ভোট: ইসির প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বার্তা

আসন্ন গণভোট ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি জোরদার করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই অংশ হিসেবে প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানের নিবন্ধন কার্যক্রমের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ইসির পক্ষ থেকে এসব তথ্য ও নির্দেশনা জানানো হয়। একই দিন দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

ইসি সচিবালয়ের উপসচিব মো. হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় মাঠ কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে, ভোটকেন্দ্রের প্রাথমিক চূড়ান্ত তালিকায় কোনো পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন বা সংশোধনের প্রয়োজন হলে তা আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫’ অনুযায়ী এর আগে ভোটকেন্দ্রের খসড়া ও প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল। এবার চূড়ান্ত তালিকা পাঠানোর ক্ষেত্রে নির্বাচনী এলাকার নম্বর ও নাম, থানা বা উপজেলার নাম, ভোটার সংখ্যা এবং কেন্দ্রের ক্রমিক নম্বর সঠিকভাবে যাচাই করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, তথ্যের যোগফল যাচাইয়ের পাশাপাশি অস্থায়ী কেন্দ্র বা কক্ষ থাকলে তা যথাযথ ব্যাখ্যাসহ সংশ্লিষ্ট কলামে উল্লেখ করতে হবে। ভোটার ও ভোটকক্ষের অনুপাত নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়েছে কি না, তাও নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তুলনায় যেসব কেন্দ্র পরিবর্তন করা হয়েছে বা নতুন প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলোর আসনভিত্তিক সারসংক্ষেপ এবং জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার প্রত্যয়নপত্র পাঠাতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে, প্রবাসীদের ভোটদানের সুবিধার্থে চালু করা ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে নিবন্ধনের সংখ্যা ৪ লাখ ৬৭ হাজার ছাড়িয়েছে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৮৪০ জন প্রবাসী এই অ্যাপে নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৭৮ জন পুরুষ এবং ২৮ হাজার ৭৬০ জন নারী ভোটার। দেশভিত্তিক তালিকার শীর্ষে রয়েছে সৌদি আরব, যেখান থেকে ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৮২ জন আবেদন করেছেন। আগামী ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলবে। নিবন্ধিত ভোটারদের ঠিকানায় ডাকযোগে ব্যালট পাঠানো হবে এবং তারা ভোট দিয়ে তা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ফেরত পাঠাবেন।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে। ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ হবে ২১ জানুয়ারি এবং এরপর থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার চালানো যাবে।

এদিকে নির্বাচনের আবহে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় বিকেএমইএর প্রধান কার্যালয়ে জেলা ও শিল্প পুলিশকে গাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, নির্বাচন করা বা না করা একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। নিরাপত্তা ইস্যুতে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এক প্রার্থীর সরে দাঁড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা বড় বিষয় হলেও আজকের অনুষ্ঠানে সবাই নিরাপদেই আছেন। তিনি কেন নির্বাচন করবেন না, তা সাংবাদিকরাই ভালো অনুসন্ধান করতে পারবেন।’

ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের ভিসা কার্যক্রম ও রাষ্ট্রদূতের তলব প্রসঙ্গে উপদেষ্টা জানান, বিষয়টি তিনি সাংবাদিকদের কাছেই শুনেছেন। তবে কূটনৈতিক শিষ্টাচার অনুযায়ী পারস্পরিক তলব একটি সাধারণ প্রক্রিয়া বলে তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়া চিকিৎসাধীন শরিফ ওসমান হাদির সুস্থতা কামনা করে তাকে ‘জুলাইযোদ্ধা’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।