প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ভবনে হামলা: আগুন নিয়ন্ত্রণে, আইজিপির পরিদর্শন ও ফখরুলের নিন্দা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ভবনে হামলা এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বৃহস্পতিবার রাতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিক্ষুব্ধরা এই দুই সংবাদমাধ্যম কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে আগুন পুরোপুরি নেভানোর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলেও সতর্কতাস্বরূপ ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অগ্নিসংযোগে ভবনের নিচতলায় থাকা প্রথমা প্রকাশনের কার্যালয়টি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে। আগুনে আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে এবং ভবনের ভেতরে ধোঁয়ার আস্তরণ তৈরি হয়েছিল, যা বেলার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে আসে। তবে আগুনের লেলিহান শিখা আশপাশের ভবনগুলোতে ছড়াতে পারেনি। ঘটনাস্থলে সিআইডির বিশেষজ্ঞ দল আলামত সংগ্রহ ও তদন্তের কাজ করছে। এছাড়া শুক্রবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) বাহারুল আলম। তিনি ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন এবং দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত শোনেন, তবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।

এদিকে সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে হামলা, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নুরুল কবিরসহ অন্যদের ওপর আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার ভোরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই সহিংসতাকে দেশের শত্রুদের কাজ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, শহিদ হাদির মাগফেরাতের জন্য জাতি যখন শোক পালন করছে, তখন একটি গোষ্ঠী এই সংকটময় মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে ধ্বংসাত্মক লিপ্ত হয়েছে। তিনি সব পক্ষকে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানান এবং সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

বিএনপি মহাসচিব তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, হাদি একজন নির্বাচনী প্রার্থী ছিলেন এবং তিনি জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়েছিলেন। তিনি হাদি হত্যার পাশাপাশি প্রতিটি মব সন্ত্রাসের বিচার দাবি করেন। মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, বিগত এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা মব সন্ত্রাস জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছে। স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর বর্তমান সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতান্ত্রিক ও স্থিতিশীল সমাজ গঠন করা। তিনি বিশ্বাস করেন, দেশে শিগগিরই গণতান্ত্রিক জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

উল্লেখ্য, ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদি গত ১২ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণাকালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার পর ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর জেনারেল হসপিটালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান। ইনকিলাব মঞ্চ জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তার মরদেহ ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। সিঙ্গাপুরে প্রথম জানাজা শেষে শনিবার বাদ জোহর রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।