গণমাধ্যমে হামলা: ১০ দেশের নিন্দা ও কর্মীদের প্রতিবাদ

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনসহ ১০টি দেশ। এ ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে মানববন্ধন করেছেন সংবাদকর্মীরা। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা প্রথম আলো ও পরে দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা চালায়। এ সময় অফিসের ভেতর ও ছাদে আটকা পড়েন কয়েকজন সাংবাদিক। পরে সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের সহযোগিতায় তারা নিরাপদে বেরিয়ে আসেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা ভবনের সামনে আগুন ধরিয়ে দেয়, ভাঙচুর চালায় এবং প্রথম আলো ও ভারতের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়।

এই সহিংসতার জেরে শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশন। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্য। যুক্তরাষ্ট্র এই কোয়ালিশনের সদস্য হলেও তারা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেনি। বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধরনের সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন অগ্রহণযোগ্য এবং এটি সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও জনগণের তথ্য জানার অধিকারকে সরাসরি আঘাত করে। সংগঠনটি সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে।

হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। এতে অংশ নেন সম্পাদক মতিউর রহমান, সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হকসহ জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ সাংবাদিকরা। মানববন্ধনে নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘এটি একটি পরিকল্পিত ও সংগঠিত হামলা, যা সরাসরি সাংবাদিকদের জীবনের জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করেছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, প্রথম আলোর ২৭ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম নিরাপত্তাজনিত কারণে পত্রিকা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। তিনি এটিকে গণমাধ্যম, বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য একটি কালো দিন হিসেবে অভিহিত করেন। মানববন্ধন চলাকালে কিছু ব্যক্তি আবারও জড়ো হয়ে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।

এদিকে শুক্রবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শনে যান ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। তিনি ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন এবং দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন।

এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিও (বাংলাদেশ ন্যাপ)। দলটির নেতারা নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির এবং প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, যারা এই সহিংস ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তারা ওসমান হাদির শোকে নয়, বরং নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গেছে।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনে নির্বাচনী প্রচারণাকালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন শরিফ ওসমান হাদি। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।