৫ দিনের তল্লাশি শেষে মিলল ব্রাউন ইউনিভার্সিটির হামলাকারীর মরদেহ

যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে দুই শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন হামলাকারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দীর্ঘ পাঁচ দিন ধরে চলা ব্যাপক তল্লাশির পর পার্শ্ববর্তী নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের একটি স্টোরেজ ভবন থেকে পুলিশ তার মরদেহ খুঁজে পায়। বৃহস্পতিবার এই মরদেহ উদ্ধারের মধ্য দিয়ে ওই অঞ্চলে গত কয়েক দিন ধরে চলা আতঙ্কের অবসান ঘটেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

নিহত ওই সন্দেহভাজন হামলাকারীর নাম ক্লদিও ম্যানুয়েল নেভেস-ভ্যালেন্তে (৪৮)। তিনি পর্তুগালের নাগরিক এবং ব্রাউন ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষার্থী। ২০০১ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টি ছেড়ে যান। প্রভিডেন্স পুলিশের প্রধান অস্কার পেরেজ জানান, শনিবারের হামলার পর থেকেই নেভেস-ভ্যালেন্তেকে খোঁজা হচ্ছিল। অবশেষে নিউ হ্যাম্পশায়ারের স্যালেম শহরের একটি স্টোরেজ এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

রোড আইল্যান্ডের অ্যাটর্নি জেনারেল পিটার নেরোনহা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা শতভাগ নিশ্চিত যে এই ব্যক্তিই আমাদের লক্ষ্যবস্তু ছিল। তার গাড়িতে এমন কিছু আলামত পাওয়া গেছে, যা প্রভিডেন্সে হামলার ঘটনার সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়। এছাড়া মরদেহের পাশে একটি ব্যাগে দুটি আগ্নেয়াস্ত্রও পাওয়া গেছে।’

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ায় মূল অনুসন্ধান শেষ হলেও হামলার পেছনের উদ্দেশ্য কী ছিল, তা জানতে তদন্ত অব্যাহত থাকবে। নেরোনহা জানান, নেভেস-ভ্যালেন্তে প্রথমে শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করলেও পরবর্তী সময়ে তিনি দেশটিতে বৈধ স্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদা পেয়েছিলেন।

তদন্তে বেরিয়ে এসেছে আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট টেড ডকস জানান, ‘নেভেস-ভ্যালেন্তে এবং ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) অধ্যাপক নুনো লোরেইরো, যাকে সোমবার নিজ বাসায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মৃত পাওয়া যায়—তারা দুজনই ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে পর্তুগালের লিসবনে একই একাডেমিক প্রোগ্রামে পড়াশোনা করেছিলেন।’ বোস্টনের ইউএস অ্যাটর্নি লিয়া ফোলি পৃথক এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে যে নেভেস-ভ্যালেন্তেই অধ্যাপক লোরেইরোকে হত্যার জন্য দায়ী। গত ১৫ ডিসেম্বর ম্যাসাচুসেটসের ব্রুকলাইনে লোরেইরোর বাড়িতে তাকে হত্যা করা হয়।

ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে হামলার ঘটনাটি ঘটে গত শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার দিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বারাস ও হলি ইঞ্জিনিয়ারিং ভবনের একটি শ্রেণিকক্ষে গুলিবর্ষণের ওই ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহত এবং আরও নয়জন আহত হন। নিহতদের একজন ১৯ বছর বয়সী এলা কুক, যিনি আলাবামা অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা এবং ব্রাউন ইউনিভার্সিটির কলেজ রিপাবলিকানস সংগঠনের সহসভাপতি ছিলেন। অপর নিহত শিক্ষার্থী হলেন উজবেকিস্তান থেকে আগত মুহাম্মদ আজিজ উমুরজোকভ, যিনি পরে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেছিলেন এবং ভার্জিনিয়ায় বসবাস করতেন।

পুলিশ জানায়, কালো পোশাক পরা এক ব্যক্তির নজরদারি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ হামলাকারীর গতিবিধি শনাক্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হিসেবে কাজ করেছে। প্রভিডেন্সের মেয়র ব্রেট স্মাইলি স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘আজ রাতে আমাদের শহরের মানুষ কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে। গত কয়েক দিন ছিল অত্যন্ত কঠিন। এই পাঁচ দিনে প্রতিটি মিনিটকে ঘণ্টার মতো মনে হয়েছে।’