সংসদ ভবনে মানুষের ঢল, ঢাবিতে হাদির সমাধিস্থল দেখতে জনতার ভিড়

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির জানাজা ও দাফন প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে শোকাতুর মানুষের ঢল নেমেছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিসৌধের পাশে দাফন করা হবে। শেষবারের মতো এই তরুণ বিপ্লবীকে বিদায় জানাতে এবং তার সমাধিস্থল একনজর দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা।

শনিবার সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জানাজায় অংশ নিতে ইচ্ছুক মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। মানিক মিয়া এভিনিউতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুমতি পেয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ। নিরাপত্তার স্বার্থে চীন থেকে আমদানি করা আটটি আর্চওয়ে গেট দিয়ে সারিবদ্ধভাবে হাজারো জনতা দক্ষিণ প্লাজায় প্রবেশ করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ মিছিল নিয়ে সকাল থেকেই সেখানে জড়ো হতে থাকেন।

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি এসএম নজরুল ইসলাম দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, ‘হাদির মতো মানুষ হাজার বছরে একবার জন্মায়। তার জন্য দুই-তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাটা সৌভাগ্যের বিষয়। সারাদিন দাঁড়ানো লাগলেও আমরা অপেক্ষা করতে প্রস্তুত। ইচ্ছে ছিল হাদি ভাই সুস্থ হয়ে ফিরলে তার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেব। এখন সেই সুযোগ পাচ্ছি না, এটাই আমার বড় দুঃখ।’

অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাদির নির্ধারিত সমাধিস্থলেও ভিড় করছেন অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানেও মানুষের উপস্থিতি বাড়ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা শিক্ষার্থী ফেরদৌস আলম বলেন, ‘বিপ্লবীর জানাজায় এসেছি, তার সমাধিস্থলও দেখলাম। বিপ্লবী হাদি আজীবন এই হৃদয়ে থাকবেন। তার বিপ্লবী চেতনা থেকেই আমাদের অনাগত বিপ্লব সফল হবে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা আমিনুল ইসলাম নামের এক শুভাকাঙ্ক্ষী বলেন, ‘হাদি ভাই তেত্রিশ বছরের এমন একজন যুবক, যিনি জাতির প্রয়োজন যেভাবে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, তা আমরা পারিনি। যারা দেশের জন্য কাজ করতে চায়, তারা যেন হাদি ভাইয়ের কবরের দিকে তাকালেই শিক্ষা লাভ করতে পারে, এজন্যই আমরা চাই তাকে কবির কবরের পাশেই দাফন করা হোক।’ চাঁদপুরের মজিবুর রহমান এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করে বলেন, ‘সরকারের কাছে প্রত্যাশা, আর যেন কোনো বিপ্লবীকে জীবন দিতে না হয় এবং দেশের যুবকেরা যেন হাদির মতো হত্যার শিকার না হয়।’