ফ্লুর নতুন ধরনে বাড়ছে উদ্বেগ, আক্রান্তের সংখ্যা হতে পারে তিনগুণ
- Details
- by জীবনশৈলী ডেস্ক
ইনফ্লুয়েঞ্জা এ (এইচ৩এন২) ভাইরাসের নতুন একটি স্ট্রেইন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তারা সতর্ক করে জানিয়েছেন, এই নতুন স্ট্রেইনের কারণে এবারের ফ্লু মৌসুম স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মারাত্মক হতে পারে এবং বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুরা এতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

এইচ৩এন২ সাবক্লেড কে হিসেবে চিহ্নিত এই স্ট্রেইনটি ২০২৫-২০২৬ সালের ফ্লু টিকা তৈরির কাজ চূড়ান্ত হওয়ার পর আবির্ভূত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিকার কার্যকারিতা, রোগের তীব্রতা এবং প্রস্তুতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে।
এটি মূলত মৌসুমি ফ্লু এইচ৩এন২-এর একটি পরিবর্তিত রূপ, যা এইচ১এন১ ও ইনফ্লুয়েঞ্জা বি-এর পাশাপাশি ফ্লু সংক্রমণের প্রধান কারণ। ব্রাউন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব পাবলিক হেলথের মহামারি কেন্দ্রের পরিচালক ও অধ্যাপক জেনিফার নুজো বলেন, ‘এটি এতটাই পরিবর্তিত হয়েছে যে এর জন্য নিজস্ব সাবক্লেড ডেজিগনেশন বা শ্রেণিবিভাগের প্রয়োজন পড়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানিয়েছে, ভাইরাসটির অ্যান্টিজেনিক ড্রিফট বা বিবর্তন ঘটেছে এবং এর হেমাগ্লুটিনিন জিনে প্রায় ১০টি নতুন মিউটেশন জমা হয়েছে। সিডিসির অভ্যন্তরীণ ইনফ্লুয়েঞ্জা পর্যবেক্ষণ দলের প্রধান অ্যালিসিয়া বাড বলেন, ‘এই মিউটেশনগুলো ভাইরাসটিকে টিকার জন্য ব্যবহৃত আগের প্রতিনিধি ভাইরাস থেকে আলাদা করে তুলেছে।’
জাপান অক্টোবরের শুরুতে ইনফ্লুয়েঞ্জাকে মহামারি ঘোষণা করেছে, যা মৌসুমের অস্বাভাবিক শুরুর ইঙ্গিত দেয়। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ‘নিষ্ঠুর শীতকাল’-এর সতর্কতা দিয়ে জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এবার ফ্লু আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হতে পারে। এছাড়া কানাডা এবং দক্ষিণ গোলার্ধেও এই স্ট্রেইনের কারণে সংক্রমণ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লু ছড়ানোর সময়সীমা স্বাভাবিক থাকলেও নতুন স্ট্রেইনটি দ্রুত প্রভাবশালী হয়ে উঠছে। ৬ ডিসেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহের প্রতিবেদনে সিডিসি জানায়, ইনফ্লুয়েঞ্জা এ আক্রান্তদের ৮৬ শতাংশই এইচ৩এন২ ভাইরাসে সংক্রমিত এবং এর মধ্যে প্রায় ৮৯ শতাংশ সাবক্লেড কে গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এইচ৩এন২ প্রাধান্য বিস্তারকারী মৌসুমগুলোতে সাধারণত হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর হার বেশি থাকে। সিডিসির মেডিকেল অফিসার শিখা গর্গ বলেন, ‘অতীতে দেখা গেছে, বিবর্তন ছাড়াই এইচ৩এন২ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থাকা মৌসুমগুলোতে বয়স্ক (বিশেষ করে ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে) ও শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর হার বেশি ছিল। আমরা সেদিকেই নজর রাখছি।’
সিডিসির তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ২৯ লাখ মানুষ অসুস্থ হয়েছে, ৩০ হাজার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং ১,২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৬ লাখ এবং মৃত্যু ১,৯০০ উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে অন্তত তিনটি শিশু রয়েছে। ওয়েল কর্নেল মেডিসিনের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আমান্ডা ক্রাভিটজ বলেন, ‘এই ফ্লু মৌসুমকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। বছরের এই সময়ের তুলনায় আমরা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি রোগী দেখছি।’
টিকা তৈরির পর সাবক্লেড কে স্ট্রেইনের উদ্ভব হওয়ায় টিকার কার্যকারিতা নিয়ে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। মাউন্ট সিনাই সাউথ নাসাউ-এর সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান ডা. অ্যারন গ্ল্যাট জানান, নতুন স্ট্রেইনে এমন কিছু মিউটেশন রয়েছে যা ২০২৫-২০২৬ সালের টিকার স্ট্রেইনে ছিল না, ফলে এটি টিকার সঙ্গে পুরোপুরি না-ও মিলতে পারে। তবে যুক্তরাজ্যের প্রাথমিক তথ্যে দেখা গেছে, শিশুদের জরুরি বিভাগে যাওয়া রোধে টিকাটি ৭২ থেকে ৭৫ শতাংশ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ৩২ থেকে ৩৯ শতাংশ কার্যকর। ডা. অ্যারন গ্ল্যাট বলেন, ‘প্রতি বছর আমরা যা দেখি, এটি তার চেয়ে খুব একটা ভিন্ন নয়।’
উদ্বেগের বিষয় হলো, গত বছরের তুলনায় এবার ফ্লু টিকার হার প্রায় ৭ শতাংশ কমেছে। অধ্যাপক জেনিফার নুজো জানান, মার্কিন সরকারের ৪৩ দিনের শাটডাউনের কারণে টিকার প্রচার ও তথ্যের নাগাল বাধাগ্রস্ত হয়েছিল, যা এই হ্রাসের অন্যতম কারণ।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই স্ট্রেইনের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে তীব্র জ্বর (১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট), গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা, কাশি এবং শিশুদের ক্ষেত্রে বমি। ইয়েল স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডা. অ্যান জিংক বলেন, ‘টিকা ভাঙা হাড়ের জন্য স্প্লিন্টের মতো কাজ করে; এটি সুরক্ষা দিতে পারে, তবে যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।’ তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত এই স্ট্রেইনটি প্রচলিত অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞরা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু নিয়েও সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। ডব্লিউএইচও কোলাবোরেটিং সেন্টারের পরিচালক রিচার্ড ওয়েবি বলেন, ‘এইচ৫এন১ ভাইরাস থেকে সাধারণ মানুষের ঝুঁকি এখনও খুব কম। তবে এইচ৫ মহামারি দেখা দিলে তা কোভিড-১৯ মহামারিকেও হার মানাতে পারে।’ এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ায় হাঁসের খামারে নতুন করে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হওয়ার কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.