ঢাকায় জড়ো হচ্ছেন লাখো বিএনপি নেতাকর্মী, হোটেলে ঠাঁই নেই

দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দেশের মাটিতে পা রাখছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সব ঠিক থাকলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ১১টা ৪৫ মিনিট থেকে ১২টার মধ্যে তাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। এর আগে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে রওনা হয়ে ফ্লাইটটি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি করবে। তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকা উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে, আর দেশজুড়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে বাঁধভঙা উচ্ছ্বাস।

প্রিয় নেতাকে বরণ করে নিতে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় (কুড়িল বিশ্বরোড মোড় থেকে পূর্বাচলমুখী সড়কের উত্তর অংশে) গণসংবর্ধনার আয়োজন করেছে বিএনপি। সেখানে ৪৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩৬ ফুট প্রস্থের একটি বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত লাগানো হয়েছে ৯০০টি মাইক। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে জনসমুদ্রে রূপ দিতে সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসার ঢল নেমেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রত্যাশা, এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে এবং এটি বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইতোমধ্যে ঢাকার আবাসিক হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোর অধিকাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। বিশেষ করে মহাখালী, গুলশান, বনানী, উত্তরা, পল্টন ও ফকিরাপুল এলাকার হোটেলগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। আবাসন সংকটে অনেকে আত্মীয়-স্বজন বা মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের কাছে আশ্রয় নিচ্ছেন।

নেতাকর্মীদের ঢাকায় যাতায়াতের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে ১০ জোড়া বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ দিয়েছে। কক্সবাজার, জামালপুর, টাঙ্গাইল, ভৈরববাজার, গাজীপুর, পঞ্চগড়, খুলনা, পাবনা (চাটমোহর), রাজশাহী ও যশোর থেকে এসব বিশেষ ট্রেন নেতাকর্মীদের নিয়ে ঢাকায় আসবে। এছাড়া নিয়মিত ট্রেনগুলোতে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হয়েছে। তবে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতিকালে নেতাকর্মীদের ভিড় না করার জন্য দলের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তারেক রহমানের আগমন ঘিরে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও এর আশপাশের এলাকায় পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিমানবন্দরে দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, বিএনপির পক্ষ থেকে যে ধরনের নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে, সরকার তা প্রদানে সহযোগিতা করছে। পুলিশ, র‍্যাব, এপিবিএন ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছেন।

দেশব্যাপী বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ঢাকায় আসার ব্যাপক প্রস্তুতি লক্ষ্য করা গেছে। চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে অন্তত এক লাখ নেতাকর্মী ট্রেন, বাস ও মাইক্রোবাসে করে ঢাকায় আসছেন। কুমিল্লা উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর থেকে প্রায় দেড় লাখ নেতাকর্মী যোগ দেবেন। এছাড়া ভোলা থেকে ১০টি লঞ্চে প্রায় এক লাখ এবং শরীয়তপুর থেকে ১০০ বাস ও ১০টি লঞ্চে ২০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় আসছেন। মাদারীপুর থেকে ৩০ হাজার নেতাকর্মী আড়াই শতাধিক বাসে, বরগুনা থেকে ৫০টি বাস ও একটি লঞ্চে প্রায় ৫০ হাজার, এবং গাইবান্ধা থেকে শতাধিক বাসে ২০ হাজার নেতাকর্মী রওনা হয়েছেন। বগুড়া থেকে পাঁচ শতাধিক বাস ও বিশেষ ট্রেনে অর্ধলক্ষাধিক এবং রাজশাহী থেকে প্রায় ৩৫ হাজার নেতাকর্মী সংবর্ধনায় যোগ দিতে ঢাকায় আসছেন। নাটোর থেকে ১৩০টি বাস ও হবিগঞ্জ থেকে অর্ধলক্ষাধিক নেতাকর্মী ঢাকায় পৌঁছানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসছেন।

নারায়ণগঞ্জে নেতাকর্মীদের উৎসাহ উদ্দীপনা তুঙ্গে। জেলা ও মহানগর থেকে কয়েক লাখ নেতাকর্মী সংবর্ধনায় যোগ দেবেন, যার মধ্যে প্রায় দেড় লাখ নেতাকর্মী হেঁটে পূর্বাচলের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে তারেক রহমান প্রথমে এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং এরপর তিনি পূর্বাচলের সংবর্ধনাস্থলে যোগ দেবেন। এই অনুষ্ঠানে বিএনপির শীর্ষ নেতারা ছাড়াও যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।