তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ও রাজনৈতিক মহলের প্রতিক্রিয়া

দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগের নির্বাসন শেষে দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫) তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠন। ১৭ বছর পর তার এই ফিরে আসাকে দেশের রাজনীতিতে ‘ইতিবাচক প্রভাব’ এবং ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ’ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বিএনপির শীর্ষ নেতার দেশে ফেরার ঘটনাকে অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে অভিহিত করেছেন। বৃহস্পতিবার বড়দিন উপলক্ষে তেজগাঁওয়ের জপমালা রাণী গির্জায় শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দেশের রাজনীতিতে যে শূন্যতা ছিল, তারেক রহমানের আগমনে তা পূরণ হবে। প্রেস সচিব উল্লেখ করেন, দেশ বর্তমানে একটি ‘ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশন’ বা গণতান্ত্রিক উত্তরণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং সামনে বড় নির্বাচন। তারেক রহমানের আগমনে এই উত্তরণ প্রক্রিয়া আরও মসৃণ হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপির চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের নিরাপত্তা সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এদিন রাজধানীর পূর্বাচলে আয়োজিত বিশাল গণসংবর্ধনায় যোগ দেন তারেক রহমান। সেখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা করেন, আগামী ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তাতে তারেক রহমানের নেতৃত্বেই দল জয়ী হবে। বিগত আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা ফ্যাসিস্ট বিদায় করেছি। ইনশাআল্লাহ, ২০২৬ সালে তারই নেতৃত্বে আমরা আবারও জয়ী হব।’ এ সময় পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় উপস্থিত নেতাকর্মী ও জনতার স্লোগানের জবাবে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম এক বিবৃতিতে বলেন, পতিত ফ্যাসিস্টের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তাকে দীর্ঘ সময় নির্বাসনে থাকতে হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাজনীতি থেকে প্রতিহিংসা চিরতরে উৎখাত হোক, সেই প্রচেষ্টায় তারেক রহমান অবদান রাখবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তবে অভ্যুত্থানের পরেও তার দেশে ফিরতে দেরি হওয়ার পেছনে ‘অস্পষ্ট কারণ’ ও ‘কারও নিয়ন্ত্রণ’ থাকার শঙ্কার বিষয়ে বিএনপিকে অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বান জানান চরমোনাই পীর।

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বিবিসি বাংলাকে জানান, বিষয়টি তারা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঐক্যের ব্যাপারে তারেক রহমান কী ভূমিকা রাখেন এবং তার পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবায়ন করেন, সেদিকে জামায়াত নজর রাখবে বলে জানান দলটির শীর্ষ নেতারা।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, হাজারো শহীদের রক্তদানের মধ্য দিয়ে অর্জিত গণঅভ্যুত্থানের ফলেই তারেক রহমান ও তার পরিবার দেশে ফিরতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ‘নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় সহাবস্থান এবং সুস্থ প্রতিযোগিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলাই এখন আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভিন্নমতের কারণে কোনো রাজনৈতিক নেতাকে যেন আর রাষ্ট্রীয় দমনের শিকার হতে না হয়, সেটিই তাদের লক্ষ্য।

এছাড়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এক বিবৃতিতে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই আগমন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সংহত করার পাশাপাশি রাজনীতিতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করবে।