ভেনেজুয়েলায় মার্কিন অবরোধকে ‘আধুনিক যুগের জলদস্যুতা’ বলল রাশিয়া

ভেনেজুয়েলার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞাকে ক্যারিবীয় সাগরে আধুনিক যুগের জলদস্যুতা এবং সশস্ত্র লুণ্ঠনের সঙ্গে তুলনা করেছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওয়াশিংটনের এমন আচরণের কারণে ওই অঞ্চলে চরম আইনহীনতা তৈরি হচ্ছে এবং বড় ধরনের বিপর্যয়ের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমরা আজ ক্যারিবীয় সাগরে সম্পূর্ণ আইনহীনতার এক চিত্র দেখতে পাচ্ছি। সেখানে বহু আগে বিস্মৃত হওয়া অন্যের সম্পদ দখল তথা জলদস্যুতা ও সশস্ত্র দস্যুবৃত্তি আবার ফিরে এসেছে।’

তিনি উল্লেখ করেন, রাশিয়া বরাবরই উত্তেজনা কমানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। একই সঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাস্তববাদী ও যুক্তিনির্ভর দৃষ্টিভঙ্গি আন্তর্জাতিক আইনের কাঠামোর মধ্যে থেকে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান বের করতে সহায়তা করবে।

জাখারোভা বলেন, ‘ভেনেজুয়েলার সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষা এবং দেশটির স্থিতিশীল ও নিরাপদ উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকার যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, রাশিয়া তার প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছে।’

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র জানান, চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত সামরিক উপস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই বৈঠকে অধিকাংশ দেশ ওয়াশিংটনের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। রাশিয়ার দাবি, এসব পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইন ও নৌ-চলাচলের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করছে।

এ সময় মারিয়া জাখারোভা উত্তেজনা কমিয়ে ক্যারিবীয় অঞ্চলকে শান্তির জনপদ হিসেবে সম্মান জানানোর জন্য মার্কিন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি ভেনেজুয়েলা থেকে রুশ দূতাবাস সরিয়ে নেওয়া হয়েছে—এমন খবরটিকে তিনি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন।

এর আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানিয়েছিলেন, ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন অভিযান, শক্তি প্রয়োগের হুমকি বা বাস্তব হামলা দেশটির সার্বভৌমত্ব এবং জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন। তারা এসব হামলাকে আঞ্চলিক শান্তির জন্য বিপজ্জনক হিসেবে আখ্যা দেন।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, ‘ক্যারিবীয় অঞ্চলের অভিযানে নিহত ব্যক্তিরা মাদক পাচারকারী ছিলেন—যুক্তরাষ্ট্র এমন কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি।’ আন্তর্জাতিক জলসীমায় প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের কোনো আইনি ভিত্তি নেই উল্লেখ করে তারা বলেন, এগুলোকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে গণ্য করা হতে পারে। একই সঙ্গে ভেনেজুয়েলার কোনো গোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে—এমন প্রমাণও নেই বলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের আত্মরক্ষার যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেন।