পানি-খাবার-চিকিৎসা নেই: ইন্দোনেশিয়ায় সাদা পতাকা তুলে প্রতিবাদ বন্যা দুর্গতদের

মালাক্কা প্রণালীতে সৃষ্ট বিরল ঘূর্ণিঝড় গত নভেম্বরের শেষ দিকে ইন্দোনেশিয়ার তিনটি প্রদেশে আঘাত হানে। এর ফলে সৃষ্ট বন্যায় এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজারের বেশি মানুষ। মোট প্রাণহানির অর্ধেক ঘটেছে পশ্চিমাঞ্চলের আচেহ প্রদেশে। এখানে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু আচেহ প্রদেশের বহু মানুষ বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, বিদ্যুৎ ও চিকিৎসাসেবার ন্যূনতম সুবিধা পাচ্ছেন না। এতে ক্ষুব্ধ, হতাশ বাসিন্দারা। তারা টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে সাদা পতাকা তুলে সরকারের ধীরগতির ত্রাণ সহায়তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

উত্তর আচেহের গভর্নর ইসমাইল এ জলিল চলতি মাসের শুরুতে যখন প্রকাশ্যে কান্নায় ভেঙে পড়েন, তখন চরম হতাশার চিত্র ফুটে ওঠে। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার কি জানে না আমরা কী অবস্থার মধ্যে আছি?’

তবে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো বিদেশি সহায়তা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে পরিস্থিতি ‘নিয়ন্ত্রণে আছে’ বলে দাবি করেছেন। গত সপ্তাহে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়া এই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম।’ এ ছাড়া তিনি এখনো এটিকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করার আহ্বান উপেক্ষা করে যাচ্ছেন। এটি করা হলে জরুরি তহবিল ছাড় ও ত্রাণ কার্যক্রম আরও দ্রুত করা যেত।

প্রাবোওর প্রশাসনকে ক্রমেই প্রতিক্রিয়াশীল, অগোছালো ও বাস্তবতা-বিচ্ছিন্ন বলে সমালোচনা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈশিষ্ট্যগুলোই ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে জনতাবাদী প্রতিশ্রুতির ওপর ভর করে ক্ষমতায় আসা তার প্রেসিডেন্সির পরিচায়ক হয়ে উঠছে।

চলতি বছরে প্রাবোওর প্রধান উদ্যোগ বিলিয়ন ডলারের বিনামূল্যের স্কুল খাবার কর্মসূচিতে গণহারে খাদ্যে বিষক্রিয়ার ঘটনায় বিতর্ক তৈরি হয়। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বেকারত্ব ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। এটি ছিল কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় আন্দোলনগুলোর একটি। এ অবস্থায় নভেম্বরের বন্যা মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকা প্রাবোওর জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও তার জনপ্রিয়তার হার এখনো প্রায় ৭৮ শতাংশে স্থির।

গত বৃহস্পতিবার আচেহর রাজধানী বান্দা আচেহে ডজনখানেক মানুষ সাদা পতাকা হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বিদেশি সহায়তার পথ খুলে দেওয়ার দাবি জানান। বিক্ষোভকারীদের ভিড়ে দেখা যায় একটি ছোট মেয়ের হাতে ধরা কাগজে লেখা, ‘আমার বয়স মাত্র তিন বছর। আমি একটি নিরাপদ ও টেকসই পৃথিবীতে বড় হতে চাই।’

আন্দোলনকারীরা বলছেন, সাধারণত আত্মসমর্পণের প্রতীক হিসেবে দেখা হলেও আচেহজুড়ে ভাঙা ছাদে, নদীর ভাঙা তীরে ও মসজিদের সামনে উড়তে থাকা এই সাদা পতাকা আন্তর্জাতিক সংহতির আহ্বান।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া হুসনুল খাওয়াতিননিসা বিবিসিকে বলেন, ‘এই পতাকার মানে আমরা হাল ছেড়ে দিচ্ছি না। এটি একটি বিপদের সংকেত। বাইরের বন্ধুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আমরা এটি করছি, যাতে তারা বুঝতে পারে আচেহর অবস্থা কতটা ভয়াবহ।’

অনেক গ্রাম পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সড়ক ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে বহু এলাকা এখনো বিচ্ছিন্ন। বেঁচে যাওয়া মানুষ রোগব্যাধি ও অনাহারের কথা বলছেন। আরেক আন্দোলনকারী নুরমি আলি চিৎকার করে বলেন, ‘আর কতদিন আমাদের কাদা আর বন্যার পানিতে গা ধুতে হবে?’

প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘের সহায়তা চেয়েছে। আচেহর গভর্নর জানিয়েছেন, তিনি যে কোনো জায়গা, যে কারও কাছ থেকে সাহায্যকে স্বাগত জানাবেন। অন্যদিকে প্রাবোওর প্রশাসন বলছে, জাতীয় পর্যায়ে ত্রাণ কার্যক্রম চলছে এবং পুনর্গঠনের জন্য প্রায় ৬০ ট্রিলিয়ন রুপিয়া (প্রায় ৩.৬ বিলিয়ন ডলার) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।