শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে দেশ: ফ্লাইট নামল কলকাতায়, স্থবির জনজীবন

উত্তরের হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশায় দেশজুড়ে জেঁকে বসেছে শীত। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫) দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রার পারদ উল্লেখযোগ্য হারে নিচে নেমে গেছে। এদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে, যা ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, যশোর ছাড়াও চুয়াডাঙ্গা, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

ঘন কুয়াশার কারণে আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় রানওয়েতে কুয়াশার ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা থেকে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ফ্লাইট ওঠানামায় বিঘ্ন ঘটে। এ সময় ঢাকাগামী পাঁচটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ঢাকায় নামতে না পেরে ভারতের কলকাতায় অবতরণ বা ডাইভার্ট করতে বাধ্য হয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস এম রাগীব সামাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কলকাতা বিমানবন্দরে চলে যাওয়া ফ্লাইটগুলোর মধ্যে কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি, জাজিরা এয়ারওয়েজের দুটি এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কুয়েত ও দাম্মাম থেকে আগত দুটি ফ্লাইট রয়েছে। এছাড়া ইউএস-বাংলা, এয়ার অ্যারাবিয়া ও সালাম এয়ারসহ বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ২ থেকে ৪ ঘণ্টা বিলম্বে অবতরণ করায় যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।

শীতের তীব্রতা রাজধানী ঢাকাতেও অনুভূত হচ্ছে। ঢাকায় শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে প্রায় ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আগের দিনগুলোর তুলনায় কম। আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, দেশের অধিকাংশ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। রংপুর বিভাগের নীলফামারীর ডিমলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি, রংপুরে ১১ দশমিক ৫, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১১, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১১ দশমিক ৪ এবং দিনাজপুরে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় শুক্রবার সকালে তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকায় এবং হিমেল বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে।

তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ, রিকশাচালক এবং দিনমজুররা। কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডায় কাজের সন্ধানে বের হয়েও অনেকে কাজ পাচ্ছেন না। যশোর শহরের লালদীঘির পাড়ে কাজের সন্ধানে আসা শ্রমিক এবং রিকশাচালকরা জানান, ঠান্ডায় হাত-পা জমে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে, তবুও পেটের দায়ে পথে নামতে হয়েছে। বাহাদুরপুর এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শীতে একদিন কাজ পাই তো, তিনদিন পাই না। গত এক সপ্তাহ ধরে কাজ হচ্ছে না।’ শহরের রায়পাড়া এলাকার রিকশাচালক জোহর আলী বলেন, ‘শীতে রিকশা চালাতে গিয়ে হাত-পা জমে যাচ্ছে। ব্রেকও ঠিকমতো ধরা যাচ্ছে না।’

উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে শীতজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, সর্দি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছেন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীর ভিড় বাড়ছে। বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শহীদুল ইসলাম অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, শিশুদের পর্যাপ্ত গরম পোশাক পরিয়ে রাখতে হবে এবং প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। এর ফলে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিন উত্তরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বজায় থাকতে পারে এবং সকাল ও রাতের দিকে কুয়াশা অব্যাহত থাকবে। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।