আসন ভাগাভাগি নিয়ে ইসলামী দলগুলোর ঐক্যে ফাটল, বাড়ছে দূরত্ব

রাজপথে একসঙ্গে কর্মসূচি পালন করে শক্তির জানান দিলেও নির্বাচনের মাঠে আসন ভাগাভাগি নিয়ে ইসলামী দলগুলোর মধ্যকার ঐক্যে ফাটল ধরার উপক্রম হয়েছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আট দলীয় জোটের অন্দরে এখন অস্বস্তি চরমে। মূলত প্রতিটি দলই তাদের সাংগঠনিক শক্তির তুলনায় বেশি সংখ্যক আসনে প্রার্থিতা দাবি করায় সমঝোতা প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়েছে।

জোটের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, গত ২০ নভেম্বর থেকে আসন বণ্টন নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা চলছে। কিন্তু দলগুলোর প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সমীকরণে বড় ধরনের গরমিল দেখা যাচ্ছে। আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে কোনো কোনো শরিক দল এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথাও ভাবছে। এতে দীর্ঘদিনের গড়ে ওঠা রাজনৈতিক ঐক্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

আলোচনার টেবিলে দলগুলোর পক্ষ থেকে যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, তা বেশ দীর্ঘ। সূত্রমতে, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ৫০টি, খেলাফত মজলিস ৩০টি এবং খেলাফত আন্দোলন ২৫টি আসনে নির্বাচনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১৫০টি আসনের তালিকা জমা দিলেও তারা শতাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়। এই বিপুল সংখ্যক আসনের দাবি মেটাতে গিয়েই মূলত সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। দলটির সহকারী মহাসচিব মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ স্পষ্ট করেছেন যে, তাদের দল কখনোই অবাস্তব প্রত্যাশা করে না। তবে জোটের কেউ কেউ কঠোর অবস্থান বা ‘হার্ডলাইনে’ চলে যাওয়ায় পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। তিনি জানান, শেষ পর্যন্ত সমঝোতা না হলে তারা জোট থেকে বেরিয়ে এলেও বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনে যাবেন না। তবে এখনো তারা আশাবাদী যে শনিবার বা রবিবারের মধ্যে একটি সমাধান পাওয়া যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের এক সদস্য জানান, ঐক্যের স্বার্থে তারা সর্বোচ্চ ছাড় দিতে প্রস্তুত। অনেক আসনে শক্তিশালী প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও শরিকদের জায়গা করে দেওয়া হচ্ছে। তবে শুরুতে যে অঙ্গীকার ছিল, কিছু দলের অপ্রত্যাশিত চাহিদার কারণে সেখানে সংকট তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান জানান, আট দলের বোঝাপড়া চূড়ান্ত হওয়ার পথে নতুন কিছু দল যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করায় আসন বণ্টনের সমীকরণ মেলাতে বাড়তি সময় লাগছে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিব জালালুদ্দিন আহমেদ মনে করেন, জোটের বড় দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর আরও উদার হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘সবারই দলীয় সম্মান ও ন্যায্য অধিকার রয়েছে। প্রাপ্য আসনের চেয়ে কম প্রস্তাব আসাতেই ঝামেলা তৈরি হয়েছে।’ অবশ্য খেলাফত মজলিশের মহাসচিব আহমদ আব্দুল কাদেরের মতে, ঐক্য ধরে রাখতে সবাইকেই কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করতে হবে এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় পর্যন্ত আলোচনার সুযোগ থাকবে।

রাজনীতির মাঠে আট দলের এই জোট শেষ পর্যন্ত অটুট থাকবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা থামছে না। শরিকদের মধ্যে বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের দোলাচল থাকলেও শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে ঐক্যের কথাই বলছেন। ভেতরে ভেতরে চলা দরকষাকষি ও মনস্তাত্ত্বিক চাপ কাটিয়ে শেষমেশ তারা একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।