তারেক রহমানের জন্য আপাতত শাহবাগ ছাড়ল ইনকিলাব মঞ্চ

সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করতে শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যাচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁর আগমন উপলক্ষে শাহবাগে আন্দোলনরত ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীরা রাস্তা ছেড়ে দিয়েছেন।

সকালে সংগঠনটির কর্মী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমা মাইকে শাহবাগ ছাড়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আজ সকাল ১১টায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আসবেন শহিদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করতে। তাঁর যাওয়া-আসার সুবিধার্থে, আমরা এই রাস্তা ছেড়ে দিচ্ছি। তারা চলে যাওয়ার পর আবার বেলা ১২টার দিকে আবার অবস্থান নেব।’

সকাল ৯টা ২০ মিনিটের দিকে ফেসবুক পেজে এক পোস্টে ইনকিলাব মঞ্চ জানায়, তারেক রহমানের ওসমান হাদির কবর জিয়ারত উপলক্ষে ইনকিলাব মঞ্চ শাহবাগ মোড় থেকে ডানদিকে আজিজ সুপারমার্কেটের সামনে অবস্থান নিয়েছে। ঠিক দুপুর ১২টায় পুনরায় শাহবাগ মোড়ে শহিদ হাদি চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। বিচার আদায়ের দাবিতে সারা দেশের জনতাকে শহিদ হাদি চত্বরে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

ওসমান হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার দাবিতে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে সংগঠনের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, তারা সারা রাত রাজপথে অবস্থান করবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ঘোষণা অনুযায়ী তারা তীব্র শীত উপেক্ষা করে সারারাত সেখানেই ছিলেন। বিকেলে ইনকিলাব মঞ্চ ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বাংলাদেশের জনগণকে শহীদ ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে শাহবাগে এসে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

গতকাল সন্ধ্যায় ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের মাইকে ঘোষণা করেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত শহীদ হাদি হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার না করা হবে, ততক্ষণ আমরা রাজপথ ছাড়ছি না। আমাদের আর ঘরে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’

এর আগে শুক্রবার জুমার নামাজের পরপরই পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন ইনকিলাব মঞ্চের কর্মীরা। এতে মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগমুখী সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামলেও আন্দোলনকারীরা রাস্তা দখল করে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধারণ মানুষও এই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে যোগ দিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন আয়োজকরা।

গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীতে গুলিবিদ্ধ হন ওসমান হাদি। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হলে ১৮ ডিসেম্বর সেখানে তার মৃত্যু হয়। ২০ ডিসেম্বর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জানাজা শেষে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দাফন করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ এখনো পলাতক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারণা, মাসুদ ভারতে পালিয়ে গেছেন, তবে তার পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে তারেক রহমানের আগমনের খবরে এরই মধ্যে ছাত্রদলসহ বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন। তারা থেমে থেমে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গতকালই জানিয়েছেন, শনিবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সকল সদস্যসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে বেলা ১১টায় হাদির কবর জিয়ারত করতে যাবেন তারেক রহমান। এরপর তিনি আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে ভোটার হবেন এবং নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) রেজিস্ট্রেশন করতে যাবেন। তারপর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে শ্যামলীতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) যাবেন তারেক রহমান।