এনসিপির একাত্মতা, ৮ বিভাগীয় শহরে অবরোধের ডাক ইনকিলাব মঞ্চের

শরীফ ওসমান হাদি হত্যার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং বাংলাদেশকে ‘ভারতীয় প্রভাবমুক্ত’ করার দাবিতে রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে একযোগে অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। সংগঠনটির ঘোষণা অনুযায়ী, সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টানা সাত ঘণ্টা এই কর্মসূচি পালন করা হবে। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে শাহবাগে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচি থেকে এই ঘোষণা দেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের।

এর আগে শনিবার রাতে শাহবাগে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে যান তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। ডিএমপি কমিশনার জানান, হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে এবং ইতোমধ্যে ফয়সালের বাবা-মা, স্ত্রী ও শ্যালকসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তে দুটি পিস্তল, একটি মোটরসাইকেল এবং ২১৮ কোটি টাকার একটি রহস্যজনক চেক উদ্ধারের তথ্যও জানান তিনি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী ৭ জানুয়ারি অর্থাৎ ১০ দিনের মধ্যে মামলার চার্জশিট জমা দেওয়া সম্ভব হবে। বিস্তারিত তথ্য জানাতে রবিবার সকালে ডিবি প্রধান সংবাদ সম্মেলন করবেন বলেও উল্লেখ করা হয়।

তবে উপদেষ্টা ও পুলিশ কমিশনারের এই ১০ দিনের আশ্বাস প্রত্যাখ্যান করেছে ইনকিলাব মঞ্চ। সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়, তিন কার্যদিবসের মধ্যে চার্জশিট প্রদান এবং ২৬ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন করতে হবে। আব্দুল্লাহ আল জাবের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ওসমান হাদির রক্তের সঙ্গে কোনো আপস চলবে না।’ তিনি জানান, ইনসাফের এই লড়াইয়ে তারা কোনো উপদেষ্টার সঙ্গে আপস করবেন না এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও যদি দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন, তবে তাকেও মানা হবে না।

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করে জানান, কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে ভারত সরকারকে বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে। হাদির হত্যাকারী যদি ভারতে অবস্থান করে, তবে তাকে খুঁজে বের করতে ভারত সরকার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া পলাতক আসামিদের অনুপস্থিতিতেই বিচার প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়েও তিনি আশ্বস্ত করেন। তিনি আসিয়া হত্যার উদাহরণ টেনে বলেন, দ্রুততম সময়ে হাদি হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর।

কর্মসূচি ঘোষণার সময় আব্দুল্লাহ আল জাবের অভিযোগ করেন, গত কয়েকদিন ধরে তাদের হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে তারা মৃত্যুকে পরোয়া করেন না এবং নিরাপত্তার জন্য পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থার ওপর নির্ভর করবেন না; নিজেদের নিরাপত্তা তারা নিজেরাই নিশ্চিত করবেন। তিনি গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ সংক্রান্ত খবরকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুজব বলে উড়িয়ে দেন এবং সংগঠনের অফিসিয়াল পেজ ছাড়া অন্য কোনো তথ্যে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান।

এদিকে ইনকিলাব মঞ্চের এই আন্দোলনের সঙ্গে পূর্ণ সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। শনিবার রাতে দলটির দপ্তর সেলের সদস্য সাদিয়া ফারজানা দিনার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই সমর্থন জানানো হয়। সংহতি জানাতে শাহবাগে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মনিরা শারমিনসহ অন্য নেতারা। তারা অবিলম্বে হাদি হত্যার বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।