আপনি পড়ছেন

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর প্রায় পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করেছে। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।

ভোট দেওয়ার পর কালি লাগানো আঙুল দেখাচ্ছেন মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। ছবি: এএফপি

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির মোট ৩৩০টি শহরের মধ্যে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ এলাকায় ভোটগ্রহণ চলছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সামরিক বাহিনী ও বিরোধী শক্তি এবং জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চলমান গৃহযুদ্ধের মধ্যেই এই ভোট হচ্ছে। প্রথম ধাপের পর আগামী ১১ জানুয়ারি ও ২৫ জানুয়ারি আরও দুই দফায় ভোটগ্রহণ হবে। তবে মোট ৬৫টি শহরে ভোটগ্রহণ সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হয়েছে। আল জাজিরার সাংবাদিক টনি চেং ইয়াঙ্গুন থেকে জানান, এর অর্থ হলো, এই মুহূর্তে অন্তত ২০ শতাংশ জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। শহরগুলোতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন —ভোটার উপস্থিতি কতটা হবে?

ইয়াঙ্গুনে স্থানীয় সময় রোববার সকাল ৬টায় ভোটকেন্দ্র খোলা হয়। সূর্য ওঠার পর থেকে ভোটারদের উপস্থিতি দেখা গেছে বলে জানান চেং। তবে তিনি উল্লেখ করেন, ভোটারদের বেশিরভাগই মধ্যবয়সী। তরুণদের উপস্থিতি খুব কম। ব্যালট পেপারে পছন্দের সুযোগও সীমিত। অধিকাংশ দলই সামরিক সমর্থিত।

এই নির্বাচনকে জাতিসংঘ, কয়েকটি পশ্চিমা দেশ ও মানবাধিকার সংগঠনসহ বহু সমালোচক ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নয়’ বলছেন। সামরিকবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না।

২০২০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী নোবেলজয়ী অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) এখন ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সু চি এখনও আটক রয়েছেন। সামরিক সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২০২১ সাল থেকে দেশ শাসনকারী সামরিক বাহিনীর দাবি, এই ভোট মিয়ানমারের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে নতুন সূচনার সুযোগ তৈরি করবে। সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং ধারাবাহিকভাবে এই নির্বাচনকে ‘জাতীয় পুনর্মিলনের পথ’ হিসেবে তুলে ধরছেন। ভোটগ্রহণ শুরুর পরপরই রাজধানী নেইপিদোতে নিজের ভোট দেন জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং।

রাষ্ট্রীয় পত্রিকা গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার-এ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক মতামত কলামে বলা হয়, ‘এই নির্বাচন মিয়ানমারের জন্য নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। এটি সংঘাত ও সংকটের দেশ থেকে শান্তি ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের পথে অগ্রযাত্রা।’

তবে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয়ের প্রধান ভলকার টুর্ক গত সপ্তাহে বলেন, দেশের বহু এলাকায় এখনও সহিংসতা চলছে। এই পরিস্থিতিতে এই নির্বাচন দমন-পীড়নের পরিবেশেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠন করার অধিকার কিংবা শান্তিপূর্ণ সমাবেশের পরিবেশ নেই, যা জনগণের অবাধ ও অর্থবহ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে।

২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত আনুমানিক ৯০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৩৫ লাখ মানুষ এবং প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ মানবিক সহায়তার প্রয়োজনের মধ্যে রয়েছেন। অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রাজনৈতিক অভিযোগে ২২ হাজারের বেশি মানুষ আটক রয়েছেন।

ইয়াঙ্গুনে ভোটকেন্দ্রগুলো রাতভর ঘিরে রাখা হয়। বাইরে নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন ছিল এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মোড়ে সশস্ত্র পুলিশ পাহারা দিচ্ছিল। প্রথমবারের মতো মিয়ানমারে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। এই মেশিনে কোনো ‘রাইট-ইন’ প্রার্থী বা বাতিল ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই।

ইয়াঙ্গুনে ভোট দিতে আসা ৪৫ বছর বয়সী সুয়ে মাও আন্তর্জাতিক সমালোচনাকে গুরুত্ব দিতে চান না। তিনি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘এটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। সব সময়ই পছন্দ আর অপছন্দ থাকে।’ অন্যদিকে, মান্দালয় অঞ্চলের ৪০ বছর বয়সী মো মো মিন্ট বলেন, ‘এই নির্বাচন কখনোই অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারে না। যে সামরিক বাহিনী আমাদের জীবন ধ্বংস করেছে, তাদের পরিচালিত নির্বাচনে আমরা কীভাবে সমর্থন দেব? আমরা গৃহহীন, জঙ্গলে লুকিয়ে আছি, জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে বসবাস করছি।’

আগামী দুই সপ্তাহ পর দ্বিতীয় দফা এবং ২৫ জানুয়ারি তৃতীয় ও শেষ দফার ভোটগ্রহণ হবে। ভোট গণনা ও ফল ঘোষণার তারিখ এখনও জানানো হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাপক সংঘাতের মধ্যেই স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠার সামরিক প্রচেষ্টা ঝুঁকিপূর্ণ। এমনকি বেসামরিক রূপ দেওয়া হলেও সামরিক নিয়ন্ত্রিত সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.