বিভক্ত জাতীয় পার্টি: সমঝোতা না হলে দুপক্ষের কেউই লাঙ্গল প্রতীক পাবে না

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় পার্টির (জাপা) বিভক্ত দুই অংশই দলীয় প্রতীক ‘লাঙ্গল’ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে নেতৃত্ব ও প্রতীক সংক্রান্ত বিরোধ আদালতে বিচারাধীন থাকায় সমঝোতা না হলে শেষ পর্যন্ত কোনো পক্ষই লাঙ্গল প্রতীক নাও পেতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

একদিকে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি, অন্যদিকে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন অংশ—উভয় পক্ষই আলাদাভাবে মনোনয়ন সংগ্রহ ও প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এতে করে নির্বাচনকে ঘিরে দলটির ভেতরের বিভাজন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ইতোমধ্যে ২৪৩টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। গত শুক্রবার রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী এই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সাংগঠনিকভাবে মাঠে থাকবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে দলটি প্রতীক ফিরে পাবে।

অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির আরেকটি অংশ জাতীয় পার্টি (জেপি) ও কয়েকটি দলকে সঙ্গে নিয়ে গঠন করেছে ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’ (এনডিএফ)। এই জোটে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ মোট ১৮টি রাজনৈতিক দল যুক্ত হয়েছে।

এই অংশের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জোটের পক্ষ থেকে প্রায় ২৫০টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং তারা জাতীয় পার্টির ঐতিহ্যবাহী প্রতীক লাঙ্গল নিয়েই মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রতীক সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতের চূড়ান্ত রায় আসতে পারে বলে তারা আশা করছেন এবং সেই রায়ে লাঙ্গল প্রতীক তাদের পক্ষেই যাবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।

জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব ও প্রতীক সংক্রান্ত বিরোধ বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, আদালতের রায় বা নির্দেশনা ছাড়া কমিশনের পক্ষে কোনো পক্ষকে দলীয় প্রতীক দেওয়ার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, একই দলের দুই পক্ষ যদি মনোনয়নপত্র জমা দেয় এবং প্রতীক দাবি করে, তাহলে নির্বাচন কমিশন নিজ উদ্যোগে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। আমরা আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা করছি।

তিনি আরও বলেন, আদালত থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা না এলে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের দলীয় প্রতীক ছাড়া, অর্থাৎ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে হতে পারে।

এদিকে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমার সময়সীমা শেষ হচ্ছে আজ সোমবার বিকাল ৫টায়। নির্বাচন কমিশনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির তথ্য অনুযায়ী, রবিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত সারাদেশে মোট ২ হাজার ৭৮০টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে, যার মধ্যে জমা পড়েছে মাত্র ৩১টি।

ঢাকা অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৫০৬টি এবং সিলেট অঞ্চলে সর্বনিম্ন ১২৭টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, মনোনয়নপত্র জমার সময় বাড়ানোর বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সব রাজনৈতিক দল সম্মিলিতভাবে সময় বাড়ানোর দাবি জানালে বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর। বাছাই ও আপিল শেষে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি। এরপর ২১ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে এবং পরদিন থেকে শুরু হবে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচারণা।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একই আসনে কোনো দলের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দিলে প্রত্যাহারের সময়সীমার মধ্যেই একজনকে চূড়ান্ত করতে হবে।

জাতীয় পার্টির দুই অংশের সক্রিয় অংশগ্রহণে নির্বাচনি মাঠে দলটির উপস্থিতি দৃশ্যমান হলেও শেষ পর্যন্ত কারা লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে নামতে পারবেনতা পুরোপুরি নির্ভর করছে আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর।