রাজনীতির এক অধ্যায়ের সমাপ্তি: চলে গেলেন খালেদা জিয়া

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রজিউন)। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে এই প্রবীণ রাজনীতিবীদের বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত ২৩ নভেম্বর তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। মূলত শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে তাকে এভারকেয়ারে নেওয়া হয়। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি ও হৃদরোগের মতো একাধিক জটিল স্বাস্থ্যসমস্যায় ভুগছিলেন। দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে তার চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেও শারীরিক অবস্থার কারণে তা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।

বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী। ১৯৮১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে স্বামী জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর দলের নেতাকর্মীদের আহ্বানে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন এবং পরের বছর মার্চ মাসে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। ১৯৮৪ সালের ১০ মে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বেই গত কয়েক দশকে বিএনপি দেশের রাজনীতিতে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছায়।

মৃত্যুর সময় হাসপাতালের কেবিনে তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও সেখানে ছিলেন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান, তারেকের সহধর্মিণী জুবাইদা রহমান ও তাদের কন্যা জাইমা রহমান। এ ছাড়া মরহুমার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার, তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, মেজ বোন সেলিনা ইসলাম, প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান এবং দুই নাতনি জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমান উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মৃত্যুর ঘটনায় দলটির পক্ষ থেকে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে। প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, এভারকেয়ার হাসপাতালেই এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। মরহুমার জানাজার সময় ও স্থান পরবর্তীতে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। হাসপাতালের পরিবেশও হয়ে ওঠে ভারাক্রান্ত; চিকিৎসক ও নার্সদের অনেককেই কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়।