স্বামীর কবরের পাশেই শায়িত হবেন খালেদা জিয়া, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জানাজা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে তার স্বামী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই দাফন করা হবে। আগামীকাল বুধবার বাদ জোহর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভায় জানাজা ও দাফন সংক্রান্ত এই পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের এই জরুরি বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এর আগে আজ সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি তার সম্মানে আগামীকাল থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করবে সরকার। শোক পালনের অংশ হিসেবে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণ পেয়ে যোগ দিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে এবং দলের হয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সব ধরনের সহায়তার জন্য তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবসে গত ২১ নভেম্বর ওনার সঙ্গে আমার সর্বশেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল। সেদিন তিনি বেশ উৎফুল্ল ছিলেন এবং আমার ও আমার স্ত্রীর স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়েছিলেন। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে তার উপস্থিতি আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল। তার প্রস্থান দেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।’

সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জানাজা ও দাফনের যাবতীয় বিষয়ে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করবে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আজকের এই গভীর শোকের মুহূর্তে আমরা সকলে সমবেত হয়েছি। পুরো জাতি তার দীর্ঘায়ু কামনা করেছিল। আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’

সভার শুরুতে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর তার আত্মার শান্তি কামনায় মোনাজাত পরিচালনা করেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। এছাড়া খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে একটি শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করা হয়, যা পাঠ করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

আগামীকাল বুধবার দেশের প্রতিটি মসজিদে খালেদা জিয়ার আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। একইসঙ্গে অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়গুলোতেও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনগুলোতে শোকবই খোলা হবে বলেও সভায় জানানো হয়।