ইয়েমেন থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলো সংযুক্ত আরব আমিরাত

ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই দেশটি থেকে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি অবসানের ঘোষণা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। ইয়েমেন সরকারের আল্টিমেটাম এবং সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো।

ইউএইর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার ওপর সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে, সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে এবং নিজেদের জনবলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, ইয়েমেনে অবস্থানরত অবশিষ্ট সন্ত্রাসবিরোধী দলগুলো প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

এর আগে মঙ্গলবার ভোরে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্সিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান রাশাদ আল-আলিমি ইউএইর সঙ্গে করা যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করেন। একই সঙ্গে তিনি আমিরাতের বাহিনীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইয়েমেন ত্যাগের সময়সীমা বেঁধে দেন। পাশাপাশি তিনি ৯০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন এবং সব বন্দর ও সীমান্তপথে ৭২ ঘণ্টার জন্য আকাশ ও স্থলপথে চলাচল নিষিদ্ধ করেন।

সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের একটি ‘সীমিত’ বিমান হামলার কয়েক ঘণ্টা পর এসব কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। জানা গেছে, হামলাটি ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় মুকাল্লা বন্দরে অবস্থানরত ইউএই-সম্পর্কিত দুটি জাহাজকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল। জোটের মুখপাত্র অভিযোগ করে বলেন, ‘জাহাজ দুটি অনুমতি ছাড়াই মুকাল্লা বন্দরে প্রবেশ করেছে এবং ইউএই-সমর্থিত দক্ষিণী বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের (এসটিসি) জন্য অস্ত্র ও যানবাহন খালাস করেছে।’

অবশ্য ইউএই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, ওই চালানে কোনো অস্ত্র ছিল না এবং অন্যান্য সরঞ্জাম তাদের নিজস্ব বাহিনীর জন্য পাঠানো হয়েছিল। তারা সৌদি আরবের সঙ্গে বিষয়টি সমন্বয়ের কথাও উল্লেখ করেছে। তবে সৌদি আরব নিজের জাতীয় নিরাপত্তাকে ‘লাল রেখা’ হিসেবে অভিহিত করে এসটিসির অগ্রগতিকে হুমকি বলে আখ্যায়িত করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, চলতি মাসের শুরুতে এসটিসি এবং সরকারপন্থী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের পর হাদরামাউত ও আল-মাহরা প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ এসটিসির হাতে চলে যাওয়ায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সৌদি আরব আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইয়েমেনি সরকারকে সমর্থন করে, অন্যদিকে ইউএই এসটিসিকে সমর্থন দিয়ে আসছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইয়েমেন থেকে ইউএইর সামরিক উপস্থিতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেশটির রাজনৈতিক ও সামরিক অঙ্গনে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।