রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় খালেদা জিয়ার দাফন সম্পন্ন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে স্বামী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেলে তার দাফন সম্পন্ন হয়। দাফন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরপরই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

দাফন শেষে বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। এ সময় প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং পরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে তাদের সামরিক সচিবরা কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। তারা সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও তাদের প্রতিনিধিরা এই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা পর্যায়ক্রমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পক্ষ থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার মায়ের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

পরবর্তীতে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা পৃথকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একই সঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) পক্ষ থেকেও ফুল দিয়ে সম্মান জানানো হয়। এর আগে মরদেহে সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) তত্ত্বাবধানে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করা হয় এবং মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বিকেল ৩টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখো মানুষ অংশ নেন। জানাজাপূর্ব সমাবেশে তারেক রহমান মায়ের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনবারের এই প্রধানমন্ত্রী। তার মৃত্যু ও জানাজায় বিশাল জনসমাগমের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতেও গুরুত্বসহকারে প্রচারিত হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে একে ‘বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় মর্যাদার জানাজায় মানুষের শোক’ হিসেবে অভিহিত করেছে। অন্যদিকে দ্য গার্ডিয়ান একে ‘একটি যুগের অবসান’ হিসেবে উল্লেখ করে লিখেছে, নিজেদের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীকে সমাহিত করল বাংলাদেশ।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা ও ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানাজায় বিপুল জনসমাগমের বিষয়টিতে আলোকপাত করেছে। তুরস্কের টিআরটি এবং অস্ট্রেলিয়ার এবিসি নিউজ তাদের শিরোনামে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন ও স্বামীর পাশে সমাহিত করার বিষয়টি তুলে ধরেছে।

এছাড়া ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই ঢাকায় জনসমুদ্রের কথা উল্লেখ করেছে এবং পাকিস্তানের দ্য ডন ও এক্সপ্রেস নিউজ যথাক্রমে তারেক রহমানের নেতৃত্ব এবং দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের অংশগ্রহণের বিষয়টি শিরোনামে এনেছে। মালয়েশিয়ার বার্নামা ও ফরাসি সংবাদমাধ্যম লঁ মন্তও হাজারো মানুষের উপস্থিতির কথা গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি চীনের একটি বার্তা সংস্থাও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিদায়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের বিষয়টি তুলে ধরেছে।