প্রতিবেশী ছাড়াই স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠছে কাতার

প্রতিবেশী চার দেশের নিষেধাজ্ঞার প্রায় দুই মাসের বেশি হয়ে গেলেও ভেঙ্গে পড়েনি কাতার বরং কঠোরভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। জ্বালানী সমৃদ্ধ এই দেশ হাজার হাজার কোটি ডলার অর্থনীতি ও নিরাপত্তা শক্তিকে দৃঢ় করার কাজে ব্যয় করছে। সৌদি জোটের আনা সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে দোহা এক রকম আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছে।

কার্নেগি এনডাউনমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষক পেরি ক্যামাক বলেন, 'সমস্যাটা এখন ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে গেছে। দুই পক্ষের কারোরই পিছু হটার কোন সুযোগ নেই। সমস্যাটা আরো কিছুদিন দুর্গন্ধ ছড়াবে।'

কাতার এক দিকে যেমন সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, অন্যদিকে ইরান ও তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করছে যা এই অঞ্চলকে একটি নতুন অবস্থান দিতে পারে। মিত্র দেশগুলোর এই সংকটময় পরিস্থিতি নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপও কোন কাজে আসেনি।

কাতার এখন তাদের অর্থনীতিকে বহুমুখী এবং খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে কোমড়ে দড়ি বেঁধে নেমেছে। কিছুদিন আগেও যেখানে দেশটির সুপারমার্কেট বোঝাই থাকতো সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের পণ্যে, এখন সেই জায়গা দখল করেছে তুরষ্ক ও ইরানের পণ্যসামগ্রী।

গত সপ্তাহে কাতার তাদের মালিকানাধীন সেইন্ট জার্মেইন টিমের জন্য ফুটবল তারকা নেইমারকে ২৬২ মিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়। ২০২০ সালে কাতারে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপের আগে কাতার একটি ভালো বিনিয়োগ করেছে, এটা করতেই হয়। এটা তার জনসংযোগ বাড়াতেও কাজে দেবে।

কাতার গত সপ্তাহে নতুন খসড়া আইন প্রকাশ করেছে যেখানে বিদেশিদের জন্য কাতারে স্থায়ী বসবাসের পথ সুগমের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। বিদেশিরা এই দেশে গিয়ে জমি কিনতে পারবে এবং কাতারের কোন পার্টনার ছাড়াই ব্যবসা করতে পারবে। উপসাগরীয় দেশগুলো বিদেশি শ্রমিকদের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল হলেও তাদেরকে নাগরিকত্ব দিতে চায় না তাই কাতারের এই আইন কার্যকর হলে উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য তা এক নতুন দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করবে। এছাড়া প্রথমবারের মতো কাতার বিনামূল্যে চিকিৎসা ও শিক্ষার সুযোগ দিচ্ছে। এতো সব পদক্ষেপের মাধ্যমে সৌদি জোটের অবরোধের মুখে কাতার বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে এবং দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কাতার এসব সংস্কার এনে বিদেশিদের দেখাতে চাইছে যে, তারা প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আধুনিক ও সংস্কারমুখী। দোহাকে আঞ্চলিক বাণিজ্যের কেন্দ্র বানানোর চেষ্টা করছে দেশটি। 

কাতারের এতো উন্নয়নমুখী পদক্ষেপ স্পষ্ট করছে যে, সৌদি জোটের নিষেধাজ্ঞার উপযুক্ত জবাব দিচ্ছে দেশটি। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, আর কতোদূর আগাবে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান এই বিভক্তি?