আপনি পড়ছেন

ফাদার মারিনো রিগান পঞ্চােশর দশকে বাংলাদেশে আসা একজন ইতালিও ধর্ম প্রচারক, দার্শনিক, লেখক ও অনুবাদক। পরবর্তীতে যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরে তাকে বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিক ও মুক্তিযোদ্ধা খেতাব দেয়া হয়। যিনি ধর্ম আর দেশের বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে বাঙালির বন্ধু হিসেবেই সমধিক পরিচিত। সেই ফাদার মারিনো রিগান আর নেই।

Father Marino Rigan 001

বাংলাদেশে অকৃত্রিম এই বন্ধু ইতালির ভিচেঞ্চায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মহান এই দার্শনিক, লেখক ও অনুবাদকের ভাগ্নি মারতা আলেসান্দ্রো জানিনের বরাত দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্যারিস প্রবাসী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রবীশঙ্কর মৈত্রী।

ফাদার মারিনো রিগানের মৃত্যু সংবাদ শোনার পর বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফেসবুক লাইভে আসেন রবীশঙ্কর মৈত্রী। তিনি বলেন, 'দার্শনিক, লেখক, অনুবাদক ও সমাজসেবী ফাদার মারিনো রিগান মারা গেছেন। শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ২০১৪ সাল থেকে তিনি ইতালির ভিচেঞ্চায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি বাংলাদেশে ফিরতে চেয়েছিলেন কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা তাকে না ফেরার দেশে নিয়ে গেল। তার ভাগ্নি মারতা জানিন ইতালির ভিল্লভেরলা থেকে এই শোক সংবাদটি জানালেন।'

১৯২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ইতালির ভেনিসের কাছে ভিল্লভেরলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ফাদার মারিনো রিগন। ২৮ বছর বয়সে ১৯৫৩ সালে ফাদার মারিনো খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানে আসেন। পুরো দেশ ঘুরে শেষপর্যন্ত বাগেরহাটের মংলা উপজেলার হলদিবুনিয়া গ্রামে দীর্ঘস্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি। ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি তিনি গরীবদের সাহায্য, শিক্ষার প্রসার এবং চিকিৎসা সেবায় এগিয়ে আসেন।

তবে ফাদার রিগানের সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি অসুস্থ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও সেবা দেন। এর মাধ্যমেই তিনি সরাসরি বাংলার মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তার এই কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার ফাদার রিগানকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করেন।

Father Marino Rigan 02বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ফাদার মারিনো রিগান

ফাদার রিগান ছিলেন একজন দার্শনিক, অনুবাদক ও লেখক। তিনি বাংলা শিল্প-সাহিত্য নিয়ে বিস্তর গবেষণার করেন। পরে সেটি ইতালীয় ভাষায় অনুবাদ করেন। তিনিই ইতালীয় ভাষায় অনুবাদ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলিসহ প্রায় ৪০টি কাব্যগ্রন্থ ও গানের মধ্যে ছিল লালন সাঁইয়ের তিন শতাধিক গান। পাশাপাশি তিনি জসীম উদ্দীনের নকশীকাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাটসহ বিভিন্ন জনপ্রিয় কবিদের কবিতা অনুবাদ করেন। ১৯৯০ সালে তার হাত ধরেই ইতালিতে রবীন্দ্র অধ্যয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

শিক্ষামূলক কার্যক্রমের ফাদার রিগানের ছিল প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে তার তত্ত্ববধানেই প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেখানে ছিল সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য বৃত্তির সুবিধা। তার হস্তক্ষেপেই ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশের একটি নৃত্যনাট্যের দল ইতালিতে মঞ্চস্থ করে ‘নকশীকাঁথার মাঠ’।

ফাদার রিগান ২০০১ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এরপর চিকিৎসার জন্য ইতালি গমন করেন তিনি। রবীশঙ্কর মৈত্রী জানান, ফাদার ম্যারিনো রিগানের শেষ ইচ্ছা ছিল ইতালিতে তার যদি মৃত্যু হলেও মরদেহটি যেন বাংলাদেশে পাঠানো হয়। স্বজনদের কাছে ফাদার রিগানের মিনতি ছিল, 'মৃত্যু হলে আমার লাশটি বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিও।'

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.