রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মিয়ানমারে চলমান সহিংসতায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য সব ধরণের কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশে। এরমধ্যে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজে বের করার আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২৪ অক্টোবর জাতিসংঘ দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সমাজের পক্ষ থেকে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আনান কমিশন বাস্তবায়ন করে তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে হবে।' মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানের নামে চলমান হত্যা-নির্যাতনে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বলে এসময় মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে পাঁচটি প্রস্তাবনা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়েছিল। এই প্রস্তাবনার আলোকে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, 'চলতি বছর যখন বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ দিবস পালিত হলো তখন মিয়ানমারে চলমান জাতিগত নির্মূল থেকে বাঁচতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ইতোমধ্যে ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছে। যাদের অধিকাংশই শিশু, নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক। রোহিঙ্গাদের যথাযথ নিরাপত্তা, মর্যাদা ও সম্মান দিয়ে দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে।'

জাতিসংঘের একটি বড় অংশীদার হতে পেরে বাংলাদেশ গর্বিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিশ্বব্যাপী শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে বাংলাদেশ জাতিসংঘের একটি বড় অংশীদার হতে পেরে গর্বিত। বিগত ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশের সেনারা সবচেয়ে সহিংস স্থানসহ বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী কর্মসূচিতে সফলতার সঙ্গে অংশগ্রহণ করছে।'

একই দিনে জাতিসংঘের দপ্তরে নিযুক্ত বাংলাদেশের দূত শামীম আহসান বলেছেন, 'এখনো প্রত্যেকদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী ও শিশু সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে। ফলে নানামুখী সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।' বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে অবস্থান করছে বলে জানান তিনি।

জাতিসংঘের দপ্তরে নিযুক্ত বাংলাদেশের দূত বলেন, '১৯৯৪ সালে রোয়ান্ডার সংগঠিত গণহত্যার পর কোন দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ বিতাড়িত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে চলতি বছর। এখনো রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ হয়নি। দলে দলে রোহিঙ্গা পাড়ি জমাচ্ছেন বাংলাদেশে।'

এদিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আজ বুধবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফ মাহমুদ অপু বলেন, 'সাক্ষাৎকালে সু চি বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন। এসময় তিনি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। এই ব্যাপারে সু চি একমত হয়েছেন।'

শরীফ মাহমুদ আরও বলেন, 'সু চিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দুই দেশের সুবিধাজনক সময়ে তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানিয়েছেন। সাক্ষাৎকালে অং সান সু চি বলেন, 'মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ফিরিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছে। একই সাথে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নেও কাজ করছে মিয়ানমার সরকার।'