উচ্ছেদের আশঙ্কায় দিন কাটছে ২৭০ খাসিয়া পরিবারের

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার চারটি খাসিয়াপুঞ্জির ৬০০ একর জমি জুড়ে চা বাগান গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেন। এতে কয়েক পুরুষ ধরে বসবাসরত ২৭০টি খাসিয়া পরিবার উচ্ছেদের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইতোমধ্যেই চা বাগান গড়তে জমির বন্দোবস্ত প্রস্তাব অনুমোদন করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। তবে এই জমি লিজ দেওয়ার বিরুদ্ধে স্থানীয় খাসিয়ারা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্যও ওই জমি চা বাগানের পরিবর্তে খাসিয়াদের নামে বন্দোবস্ত দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।

জানা গেছে, নিরালা, চালিতা ছড়া, নাহার-১ ও নাহার-২ খাসিয়াপুঞ্জির জমিতে আধুনিক একটি চা বাগান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেন। তার প্রস্তাবিত চা বাগানের নাম রাখা হয়েছে ‘মাহী টি এস্টেট’। গত ৩১ মে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে এই ‘মাহী টি এস্টেট’র জমির বন্দোবস্ত প্রস্তাব অনুমোদন করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

খাসিয়ারা অভিযোগ তুলেছে, সাবেক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল কুদ্দুস সরেজমিনে তদন্ত না করেই চা বাগান করার জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। সেই প্রতিবেদনের আলোকেই ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে চা বাগানের অনুকূলে জমি লিজ দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন হয়ে আসে।

এদিকে, টি এস্টেটের নামে জমির অনুমোদন হওয়ায় ওই চার পুঞ্জির ২৭০টি পরিবার উচ্ছেদের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নিরালা পুঞ্জির বাসিন্দা হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী সুমি খাসিয়া বলেন, ‘আমরা উচ্ছেদের আতঙ্কে আছি। এখান থেকে আমাদেরকে উচ্ছেদ করা হলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো? আমরা তো পান চাষ করি, এছাড়া আমাদের জীবিকা নির্বাহের বিকল্প কোনও রাস্তা নেই। এখান থেকে উচ্ছেদ করলে কী হবে আমাদের?’

ডউরিন খাসিয়া নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘কয়েক পুরুষ ধরে আমরা এখানে বসবাস করছি। এই মাটির সঙ্গে আমাদের প্রাণের সম্পর্ক। এ জায়গা ছাড়া আমাদের তো আর কোথাও যাওয়ার পথ নেই।’

নিরালা পুঞ্জির সহকারী হেড ম্যান দিগন্ত পসুয়েট খাসিয়া জানান, এই জমিগুলো লিজ পাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে অনেক আগে থেকেই আবেদন করা হচ্ছে। বর্তমানে একটি প্রভাবশালী মহল আমাদের উচ্ছেদ করে এখানে চা বাগান করার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু আমরা বংশানুক্রমে প্রায় ৫০/৬০ বছর ধরে এখানে বসবাস করে আসছি। এসব জমিতে পান, সুপারি, কলা চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমাদের উচ্ছেদ করলে কিছুই আর করার থাকবে না। তাই এখানকার সকল বাসিন্দার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন, এই জমি যেন ইজারা দেওয়া না হয়।’

এদিকে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর মাহী টি এস্টেটের নামে জমি বন্দোবস্তের প্রক্রিয়া বাতিল করে ওই জমি খাসিয়াদের নামে বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য ভূমিমন্ত্রীকে ডিও লেটার পাঠিয়েছেন জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ। সেই ডিও লেটারে উল্লেখ করা হয়, ওই ৬০০ একর জমিতে প্রায় ২৭০ খাসিয়া পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বংশানুক্রমে বসবাস করে আসছে। এই জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করেছে।