আপনি পড়ছেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রায় একই ক্যাম্পাসে পাশাপাশি তিনটি প্রতিষ্ঠান। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ ভর্তি যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হন এসব প্রতিষ্ঠানে। দেশের শীর্ষস্থানীয় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে এসে অসংখ্য শিক্ষার্থী তাদের সোনালী জীবনকে করে তোলেন বিষময়। রঙিন জীবনের আশা-আকাঙ্খার স্বপ্নকে তারা উড়িয়ে দেন হতাশার ধোঁয়ায়।

dhaka university and buet

কেউ ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে, কেউ আবার বন্ধু কিংবা 'খারাপ' রুমমেটের সঙ্গ পেয়ে হাতে তুলে নেন নেশা দ্রব্য। ক্যাম্পাসে নেশা দ্রব্য সহজলভ্য এবং ব্যবহারের নিরাপদ স্থান হওয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে মাদকের বিষাক্ত থাবা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে পুলিশও তাদের গ্রেপ্তার করার সাহস পায় না। অনেকে আবার প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠনের নেতা কিংবা বড় ভাইর আস্থাভাজন হতে যেয়ে প্রথম বর্ষেই হাতে তুলে নেন মাদক।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর প্রথমে সিগারেট দিয়ে শুরু করলেও কিছু দিনের মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষার্থী গাঁজাসহ বেশ কিছু নেশায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। নেশাগ্রস্থ অনেকেই আবার বারে (মদ বিক্রির দোকান) গিয়ে রঙিন পানির পার্টিতে মজেন। অনেকে ইয়ার ড্রপ দিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। এমনই একজন নেশাগ্রস্থ শিক্ষার্থী বলেন, 'শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে পড়েও জীবন নিয়ে আমি হতাশ। হতাশা বাড়লেই আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু হয় নেশা।'

Smoking publicly at du
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন (ভিসি চত্ত্বর) এলাকা থেকে তোলা

বেসরকারি একটি সংস্থার পরিচালিত এক গবেষণা মতে, ৭৩ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মানসিক হতাশায় জর্জরিত। ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা নিয়ে হতাশ। মা-বাবা ও পরিবারের জন্য ৬০ ভাগ শিক্ষার্থী নিজের পছন্দের বিষয়ে পড়ে না। প্রথম বর্ষের চেয়ে চতুর্থ বর্ষে শিক্ষার্থীর হতাশার মাত্রা চার গুন বেড়ে যায়। ১৭ ভাগ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপআউটের খাতায় নাম লেখায়। ভবিষ্যৎ পেশা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫ ভাগ শিক্ষার্থী অনিশ্চিয়তায় ভোগে। বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে তিন বছর পর্যন্ত চাকরি পায় না ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। ৭৯ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজ পছন্দের পেশায় কাজের সুযোগ পায় না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই হতাশার চিত্র তাদের মাদকাসক্ত করার পিছনে অন্যতম বড় ভূমিকা পালন করে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

তথ্য মতে, নেশা দ্রব্যের পিছনে ব্যয় করতে হয় প্রচুর অর্থ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এসব শিক্ষার্থীরা কোথায় পায় নেশার টাকা? কিংবা কোথা থেকে আসে তাদের নেশার যোগান? এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে অনুসন্ধানে নেমে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট ক্যাম্পাসের আশেপাশেই ছড়িয়ে আছে বিশাল মাদকচক্র। সন্ধ্যার পরে বাড়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা। আর সেই টাকায় মাস্তি করে চলে মাদক সেবন। এছাড়াও কর্মীদের দেয়া ছাত্র নেতাদের বখশিস, ব্যক্তিগত অর্থ ও চাঁদার টাকায় জমে নেশার আসর।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, গাউসুল আজম মার্কেট, নিউমার্কেটের ১ নং গেট ও তার আশেপাশের এলাকা, পলাশী, আজিমপুর মেটার্নী হাসপাতাল, কলোনী এলাকা, ঢাকা মেডিকেল গেট, চানখাঁরপুল এলাকার ফুটপাত, বকশীবাজার মোড়, শহীদ মিনারের পিছনদিকসহ আশে-পাশের বেশ কয়েকটি স্থানে সন্ধ্যার পর থেকে স্বল্প মূল্যে ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় প্রায় প্রতিদিনই বিক্রি হয় বিভিন্ন নেশা দ্রব্য। হাত বাড়ালেই গাঁজা, ইয়াবা, ফেন্সিডিল, হেরোইন, প্যাথেডিনসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য পেয়ে যাচ্ছেন খরিদ্দাররা।

নিত্য নতুন কৌশলে বিক্রি হওয়া এসব মাদকদ্রব্যের সহজ লভ্যতার ফলে ক্রেতার সংখ্যাও বাড়ছে। এ অঞ্চলের অধিকাংশ বিক্রেতা রিক্সাচালক। রিকশার সিটের ভেতরে রেখে, পান-সিগারেটের ডালার ভিতর করে দেদারছে চলছে গাঁজা বিক্রি । এই এলাকার রিক্সাওয়ালাদের বড় একটি অংশকে প্রায় সময়ই নির্জন স্থানে দলবদ্ধভাবে শুয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। পলাশী থেকে চানখারপুলে এবং পাশ্ববর্তী সংযোগ সড়কের দুপাশ ধরে থামিয়ে রাখা রিক্সাগুলোতে চলে রমরমা গাঁজার ব্যবসা। এসব রিকশাচালক খালি রিকশা নিয়ে ঘুরাঘুরির আড়ালে সিগারেটের ভেতরে গাঁজা ভরে বিক্রি করছে।

Cigarette hawker 630 330
রাতের বেলা ক্যাম্পাসে ঘুরাঘুরি করা অনেক হকার সিগারেট বিক্রির আড়ালে গাঁজা বিক্রি করে

২৯ অক্টোবর, রোববার সন্ধ্যা ৭টা ৩ মিনিটের দিকে শাহবাগ থানা থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে (শাহবাগ থেকে টিএসসিগামী রুটে) সোহরাওয়াদী উদ্যান সংলগ্ন ফুটপাতে দেখা গেল প্রকাশ্যেই ছোট স্টিলের কাঁচি দিয়ে গাঁজা কাটছেন একজন। তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে আরো তিনজন। এই প্রতিবেদক সেখানে যেতেই বিক্রেতা বলে উঠলো, ‘মামা এম্নে খাড়াইলে তো আমারে ধইরা নিব। মাল (গাঁজা) নিলে ৩০ টাকা দেন, এক স্টিক পাবেন।’ সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পরে উদ্যান বন্ধ থাকলেও উদ্যানের দেয়াল টপকে ভিতরে গিয়ে ছিন্নমূল মানুষেরা ভিতর থেকে গাঁজার ব্যবসা চালাচ্ছে।

সন্ধ্যার পর থেকে চারুকলা অনুষদের বিপরীত দিকের ফুটপাত দিয়ে বাংলা একাডেমি এবং তিন নেতার মাজার পর্যন্ত হেটে গেলে গাঁজার উৎকট গন্ধ নাকে লাগবে। জানা গেছে, রাতের বেলা পরমাণু শক্তি কমিশনের সাথে থাকা মাজারকে ঘিরে, শহীদ মিনারের পিছনের বন্ধ মাজারের চারপাশ ঘিরে বিভিন্ন নেশাদ্রব্যের আসর বসে।

বুয়েট ক্যাম্পাসের মূল ফটকের কাছের রাস্তার উপর থাকা ফুটওভার ব্রিজটি প্রায় সময়ই নির্জন থাকে। আর সেই সুযোগে এখানে আসর বসায় মাদকসেবীরা। বহিরাগত ছাড়াও সেখানে মাদকসেবনে অংশ নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের ছাত্ররা। এই ব্রিজটিতে ২৭ অক্টোবর (শুক্রবার) রাত সাড়ে ৮টার দিকে গাঁজা সেবনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

গত ২৬ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) রাতে গাঁজা সেবন করা নিয়ে জহুরুল হক হল ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আসিফ তালুকদারের কর্মী ও বুয়েট ছাত্রলীগের কর্মীদের মধ্য কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনার জের ধরে পরদিন শুক্রবার বিকেলে জহুরুল হক হলের ছাত্রলীগকর্মী ইমরানকে বুয়েট ক্যাম্পাসে আটকে রাখে বুয়েট ছাত্রলীগের কর্মীরা। বিষয়টি জানতে পেরে ঢাবির জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের অন্যান্য কর্মীরা ইমরানকে ছাড়িয়ে আনতে যান। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে লাঠিসোটা, রড হাতে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে সৌরভ, দিব্য, অনিক, মহুরী ও সাদমান নামের বুয়েট ছাত্রলীগের পাঁচ কর্মী আহত হয়।

এছাড়া গত ৬ জুলাই রাত ১১টার দিকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে মাদক সেবনকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীসহ ২৬ জন পুলিশের হাতে আটক হয়েছিল। সন্ধ্যার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আটককৃতরা সেখানে প্রবেশ করে মাদক সেবন করছিলেন।

শাহবাগ থানা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত শাহবাগ থানায় ৩৫টি মাদকসংশ্লিষ্ট মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর গত ছয় মাসে মাদকসেবন ও বিক্রির অভিযোগে অন্তত ৫০ জন আটক হয়েছে পুলিশের হাতে। মাদক কারবারিদের আটক করলেও ছাত্রনেতা কিংবা প্রভাবশালী কেউ ফোন দিয়ে কিংবা উপর থেকে চাপ সৃষ্টি করে তাদেরকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। ছাড়া পেয়েই তারা নতুনভাবে আবার মাদক ব্যবসা শুরু করে দেন।

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, ‘প্রতিদিন ক্যাম্পাসের আশেপাশের প্রতিটি স্পটে পুলিশ সতর্ক অবস্থায় আছে। টহল পুলিশ প্রতিদিনই তাদের দায়িত্ব পালন করছে। নতুন করে কোন স্পট বা মাদকের কারবার হচ্ছে এমন খবর পেলে আইনশৃংখলা বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত আছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, 'ক্যাম্পাসে প্রক্টরিয়াল টিমের গাড়ি রাতে ঘুরে বেড়ায়। পুলিশও টহল দেয়। আর রাতে উদ্যান বন্ধ থাকে। তারপরেও হয়ত কেউ কেউ বিচ্ছিন্নভাবে এসব কাজ চালায়। আমরা সচেতন রয়েছি এবং এসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তথ্য পাওয়া মাত্র প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা ব্যবস্থা নেব।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.